1. [email protected] : @nexttech :
  2. [email protected] : SM Solaiman : SM Solaiman
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

বিজয় দিবসের ভাবনা

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৪৪৭ Time View

হুমায়ূন কবির:
আজ ১৬ই ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস, বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তী। আজকের এইদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ৫০ বছর আগের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল বাঙ্গালির চুড়ান্ত বিজয়। এ বিজয় অর্জিত হয়েছিল দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত আর ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। বিজয়ের এ মাসে ভাবনায় আসে যুদ্ধ দিনের কথা, তৎকালীন অবরূদ্ধ বাংলাদেশের লক্ষ কোটি মানুষের অবর্ণনীয় নির্যাতন আর দু:খ কষ্টের কথা, ওপারে কোটি শরনার্থীর মানবেতর জীবন যাপনের কথা, অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা। এসব ভাবনার মাঝে দৃষ্টি চলে যায় আমার সংগ্রহে থাকা মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থগুলোর দিকে।

এসব গ্রন্থের মধ্যে যেটি আমাকে প্রায় সময় দারুণভাবে আকৃষ্ট করে সেটি হলো শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রচিত “একাত্তরের দিনগুলি”। একবার নয় একাধিকবার পড়া বইটি আবারো পড়তে ইচ্ছে হয়। নতুন করে পড়া শুরু করি। যতই পড়ি ততই আবেগ আমাকে তাড়িত করে। মনে হয় ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া যে মুক্তিযুদ্ধকে আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম তরুন বয়সে, তা যেন জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠছে আমার মানষপটে। আরো মনে হয় পুরো মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ যেন দীর্ঘকাল ধরে নীরবে লুকিয়ে আছে এ বইয়ের মাঝে। পড়ি আর অভিভূত হই, কখনোবা বেদনায় নীল হয়ে যাই। একজন মুক্তিযাদ্ধার মায়ের যুদ্ধকালীন রোজনামচা কি করে মুক্তিযুদ্ধকে জীবন্ত করে তুলতে পারে তা এ বইটি না পড়লে বুঝতে পারা যাবে না।

বইটি অনুদিত হয়েছে ইংরেজীসহ বেশ ক’টি বিদেশী ভাষায়। এ থেকেই অনুমান করা যায় বিদগ্ধ পাঠক মহলে বইটি কতোটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। “একাত্তরের দিনগুলি” প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ায়ী মাসে। সে সময়েই বইটি পড়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। আমার সংগ্রহে থাকা প্রথম সংস্করনের বইটি কেউ পড়তে নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। তাই বইটির রজত জয়ন্তী সংস্করণ ও চল্লিশতম মুদ্রণের একটি কপি আবারো কিনে নিলাম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রথমবার বইটি পড়তে গিয়ে কয়েক রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। রুমি, বদি, জুয়েল, আজাদ সহ শহীদ মুক্তিযাদ্ধাদের কল্পিত চেহারা প্রায়ই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো। আঠারো বিশ বছরেরের তরুন যুবকেরা কেমন করে এতোটা সাহসী হয়ে খোদ ঢাকা শহরে অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলেছিল ভাবতেই অবাক লাগে।

এ বইয়ের মূল নায়ক জাহানরা ইমাম ও শরীফ ইমাম দম্পতির বড় পুত্র রুমি যিনি ছিলেন অসাধারণ এক মেধাবী ছাত্র। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দারুণ ফলাফল করে ভর্তি হয়েছিলেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় একই সাথে তার ভর্তি সম্পন্ন হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজীতে। সেখানে ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বরের তিন তারিখ থেকে তার ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাকে সেখানে যেতে হতো আগস্টের শেষ সপ্তাহে। প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জনের জন্য রুমি কি যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে? রুমি কি চলমান মুক্তিযুদ্ধকে উপেক্ষা করে নিজের উজ্জল ভবিষ্যতকে প্রাধান্য দেবে।

না, রুমি বিদেশে যায়নি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ অবস্হান ও লোভনীয় শিক্ষা জীবনও তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। বরং তাকে আকৃষ্ট করেছে এদেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ। মা বাবাকে অনেকভাবে বুঝিয়ে তাদের অনুমতি নিয়ে যোগ দিয়েছে সে মুক্তিযুদ্ধে। ক্র্যাক প্ল্যাটুনের সদস্য হয়ে এই ঢাকা শহরে চালিয়েছে বেশ ক’টি সফল অপারেশন। তখনকার সময়ে ক্র্যাক প্ল্যাটুন ছিল হানাদার বাহিনীর কাছে মূর্তমান এক আতংক। দূর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো যে অগাস্ট মাসে তার যাওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রে, সেই অগাস্ট মাসের ২৯ তারিখে সে ধরা পাড়লো হানাদার বাহিনীর হাতে।

বাবা ও ছোট ভাইকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একই সাথে। তারা ফিরে এলেও রুমি কিন্তু আর ফিরে এলো না। আমি জানি না এখন যারা রুমীর বয়সী, তারা কতোজন রুমীর আত্মত্যাগের এ ইতিহাস জানে। জানুক আর নাই জানুক তার এ আত্মদান কখনো ম্লান হবে না বরং অমর হয়ে থাকবে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পরতে পরতে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত প্রগতিশীল এক নারী। কিন্তু মাতৃস্নেহ অথবা বলা যায় পুত্রশোক এমন এক জিনিস যা সময়ের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ও প্রগতিকে পেছনে ফেলে কখনো কখনো নির্ভরশীল হয়ে পড়ে পীর ফকিরের ওপরে।

শহীদ জননীও একটা সময়ে আরও ক’জন ভূক্তভোগীর সাথে শরনাপন্ন হয়েছিলেন মগবাজারে আস্তানা গাড়া এক পাগলা পীরের। তথাকথিত পীর প্রতিনিয়ত আশার বানী শোনালেও রুমী কিন্তু আর ফিরে আসেনি। স্বাধীনতার পর জানা গিয়েছিল ঐ ভন্ড পীর ছিল আসলে হানাদার বাহিনীরই এজেন্ট এবং পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পনের সাথে সাথেই সে আস্তানা ছেড়ে পালিয়ে যায়। শহীদ জননীর জন্য যেন আরও দু:সময় অপেক্ষা করছিল। বিজয়ের মাত্র তিনদিন আগে তিনি হারান তাঁর প্রিয়তম স্বামী শরীফ ইমামকে। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অকথ্য নির্যাতন ও অপমান এবং একই সাথে পু্ত্রকে হারানোর শোক তিনি সইতে পারছিলেন না। তাই বোধহয় চুড়ান্ত বিজয়ের আগ মুহূর্তে চলে গেলেন তিনি পরপারে।

পুত্র ও স্বামী হারানোর এতো বড় শোক কেমন করে সইলেন তিনি? এটি বোধহয় শহীদ জননীর পক্ষেই সম্ভব ছিল। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মহিয়সী এই নারীকে। যারা “একাত্তরের দিনগুলি”এখনো পড়েননি তাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকবে এ বইটি পড়ার জন্য। মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হলে বুঝতে হলে বেশি বেশি করে পড়তে হবে মুক্তি যুদ্ধের বই। মনে রাখতে হবে আমি আপনি আমরা যে যেই অবস্থানেই থাকি না কেনো কখনোই আমরা এখানে আসতে পারতাম না যদি না লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দেশটি স্বাধীন হতো।
ঢাকা, ১৬,১২,২০২১

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2022
কারিগরি সহায়তা: Next Tech