করোনাকালে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর স্কুল-কলেজ খুলেছিল গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর। এরপর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও বছরের পর বছর ধরেই মাধ্যমিক পর্যায়ের এসএসসি ও সমমান এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এইচএসসি ও সমমানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি বহুনির্বাচনীতেও (এমসিকিউ) অনেক বেশি প্রশ্ন থেকে কম প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয় মূল্যায়ন করা হচ্ছে পরীক্ষা ছাড়াই। ২০২১ সালে শুরু হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া। চলতি বছর এমনকি আগামী বছরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই হবে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে করা প্রশ্নে অনেক বেশি প্রশ্ন থেকে কম উত্তর দেওয়ার সুযোগ রাখায় একজন শিক্ষার্থী সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আরও সংক্ষিপ্ত করে পড়ছে। এভাবে পড়ে পরীক্ষা দিয়েও ভালো নম্বর পেয়ে যাচ্ছে তারা। পরীক্ষা বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে না এ পদ্ধতিতে। অনেক বিষয়ে না পড়েও ভালো ফল করলে ভবিষ্যতে তরুণ-তরুণীরা দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। অবিলম্বে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের এ প্রক্রিয়া থেকে ফিরে আসা উচিত। তথ্যমতে, ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে শুধু নৈর্ব্যচনিক বিষয়ে। আবশ্যিক (বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ অন্য) বিষয়গুলোতে কোনো পরীক্ষাই নেওয়া হয়নি। যেগুলোতে পরীক্ষা হয়েছে সেখানেও সিলেবাস ছিল অনেক সংক্ষিপ্ত। এমনকি ৩০টি এমসিকিউর মধ্যেও দিতে হয়েছে ১৫টির উত্তর। গত বৃহস্পতিবার থেকে চলতি বছরের (২০২২ সালের) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে পরীক্ষা নেওয়া হবে না ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং বিজ্ঞান বিষয়ে। সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হবে এ বিষয়গুলোতে। আর এই পরীক্ষায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে নম্বর। ইংরেজিতে ৫০ নম্বর ও বাকি সব বিষয়ে পরীক্ষা হচ্ছে ৫৫ নম্বরে। এই পরীক্ষাগুলোতে রচনামূলক প্রশ্নের পাশাপাশি এমসিকিউতেও অনেক বাড়তি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে, ফলে খুব অল্প প্রস্তুতি নিয়েও ভালো পরীক্ষা দিতে পারছে ছাত্র-ছাত্রীরা। আগামী নভেম্বরে শুরু হবে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এ পরীক্ষাও নেওয়া হবে এসএসসি পরীক্ষার আদলে কম সিলেবাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে অথচ অনেক বেশি প্রশ্নের মধ্যে কম প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। এমসিকিউতেও এমন অপশন রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো শিক্ষার্থী সংক্ষিপ্ত সিলেবাসকে আরও ছোট করে পড়ে পরীক্ষা দিয়ে ভালো নম্বর পেয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগ সরকার করে দিচ্ছে। পরীক্ষা বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে না বরং পরীক্ষা পদ্ধতিতে গলদ ও দুর্বলতা রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী না পড়ে ভালো ফল করলে ভবিষ্যতে সে দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এ শিক্ষাবিদ বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ঘোর বিরোধী। অবিলম্বে এ প্রক্রিয়া থেকে ফিরে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, আগামী বছরের (২০২৩ সালের) এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। গত ১১ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রকাশিত পাঠপরিক্রমা অনুযায়ী এখন স্কুল-কলেজে পড়ানো হচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের। বছরের পর বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার আগ্রহও দিন দিন কমছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সিলেবাস পুনর্বিন্যস্ত (সংক্ষিপ্ত) করা হয়েছে। চলতি বছরের পরীক্ষায় অর্ধেক নম্বরে ও কম সময়ে (তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দুই ঘণ্টায়) নেওয়া হলেও আগামী বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পূর্ণ নম্বরে, পূর্ণ সময়ে সব বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, এখন পুরোদমে ক্লাস চলছে। তাই ২০২৪ সাল থেকে আর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নয়, পুরো সিলেবাসেই এসব পরীক্ষা নেওয়া হবে।
Leave a Reply