ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে রাজা চার্লসের ভাবনা কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর শনিবার সিংহাসনে আরোহণ করা রাজা তৃতীয় চার্লস সম্পর্কে জানার ভীষণ আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। ৭৩ বছর বয়সী চার্লস যদিও বেশ কয়েক যুগ ধরেই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন। আর এই আগ্রহ মূলত ছিল প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তাঁর বিয়ে ও পরবর্তীতে বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে।

যদিও আরও কিছু বিষয় যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনীতি ও ধর্মসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ইস্যুতে তাঁর অভিমতের কারণে রাজা চার্লস মানুষের নজরের কেন্দ্রেই ছিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চার্লস ইসলাম সম্পর্কে তাঁর মতামত দিয়েছেন এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি তাঁর সম্মানের কথা বেশ খোলামেলাভাবেই প্রকাশ করেছেন। খবর আল জাজিরার।

লেখক রবার্ট জবসন তার বই ‘৭০ বছরে চার্লস : চিন্তা, আশা ও স্বপ্ন’তে উল্লেখ করেছেন যে, রাজা ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরান পড়েছেন এবং বিভিন্ন দেশের মুসলিম নেতাদের লেখা চিঠিতে আরবিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এখানে ইসলাম ও মুসলিম জাতি সম্পর্কে তাঁর কিছু চিন্তাভাবনা তুলে ধরা হলো, যা বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত:

পরিবেশ

গত কয়েক যুগ ধরেই পরিবেশ ইস্যুতে চার্লসের ভূমিকা প্রশ্নাতীত। এই ইস্যুতে বিশ্ব নেতাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।

২০১০ সালে অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘ইসলাম ও কোরআন থেকে জ্ঞানের আলোকে আমি বলছি যে, প্রাকৃতিক প্রাচুর্যেরও একটা সীমা আছে’।

চার্চ অফ ইংল্যান্ডের সদস্য চার্লস বলেছিলেন, ‘এগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো তৈরি সীমা নয়, এই সীমা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার বেধে দেওয়া সীমা আর মুসলিম জাতিকে এই সীমা লঙ্ঘন না করতে বলা হয়েছে’।

ওই বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ‘একটি সর্বগ্রাহ্য বিষয়ে আমরা সৃষ্টিকর্তার অন্যান্য সৃষ্টির সঙ্গে এই গ্রহ ভাগাভাগি করে নিয়েছি; আর তা হলো আমাদের চারপাশে বিরাজমান বিস্তৃত ও সুষম জীবন চক্র যা ছাড়া আমরা কোনোভাবেই নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারব না। ইসলাম সব সময় এই বিষয়টির শিক্ষা দেয় আর এটিকে অবজ্ঞা করা হবে; সৃষ্টির প্রতি আমাদের নির্ভরশীলতাকে অস্বীকার করা।’

রোজা

মুসলিমদের রোজা সম্পর্কে চার্লস মনে করেন রমজানের চেতনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। গত এপ্রিল মাসে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রোজা থেকে আমরা কেবলমাত্র উদারতাই নয় বরং নির্মোহ থাকা, কৃতজ্ঞতা ও একসঙ্গে প্রার্থনা করার বিষয়গুলো শিক্ষা নিতে পারি; যা বিশ্বের অসংখ্য মানুষকে ভীষণ স্বস্তি এনে দেয়। মুসলিমদের আত্মার উদারতা ও হৃদয় থেকে উৎসারিত আতিথেয়তা আমাকে কেবল মুগ্ধই করে না; বরং সামনে আমাদের আরও অনিশ্চিত সময়ে মুসলিম সম্পদায়ের রমজানে দান করার বিষয়টি আমাদের সামনে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে’।

ইসলাম ও পশ্চিমা বিশ্ব

ইসলাম ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ‘ভুল বোঝাবুঝি’ আছে উল্লেখ করে চার্লস মুসলিম ও পশ্চিমা বিশ্বকে আরও কাছে আনতে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন।

১৯৯৩ সালে অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজে বহু কাঙ্খিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘ইসলাম সম্পর্কে যদি পশ্চিমাদের এতো বেশি ভুল ধারণা থাকে তবে আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও সভ্যতায় ইসলামের যে অবদান আছে, তাকে অনেকটা অবজ্ঞা করা হবে। এটা এক ধরনের ব্যর্থতা, যা আমার চিন্তাধারায় সরাসরি ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে’।

চার্লস ইসলামের চরমপন্থাকে প্রধান নির্দেশক হিসেবে না দেখার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, যে বিষয়টি কেবলমাত্র ইসলামের একচেটিয়া মনোভাবের বিষয় নয় বরং তা খ্রিস্টীয়সহ অন্যান্য ধর্মের জন্যও একচেটিয়া মনোভাবের দর্শন।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *