আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কোম্পানি ‘এনারোঅ্যাটম’-এর প্রধান পেত্রো কোটিন বলেছেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলকারী রুশ বাহিনী স্থাপনাটিকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। যদিও স্থাপনাটির সুরক্ষায় এর চারপাশে একটি ‘অসামরিক এলাকা’ প্রতিষ্ঠার আরজি জানিয়েছে কিয়েভ। খবর বিবিসির।
পেত্রো কোটিন অভিযোগ করে বলেন, ওই পারমাণবিক স্থাপনায় অন্তত ৫০০ রুশ সেনা অবস্থান করছে। তারা এলাকাটি দখল করে রকেট লঞ্চারও মোতায়েন করেছে। কেননা ওই এলাকায় ইউক্রেনের কেউ কিছু করবে না। তারা নিজেদের অবকাঠামোর ক্ষতি করবে না, নিজেদের মানুষও মারবে না।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত মার্চ মাসের শুরু থেকে দখলে রেখেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তবে সেখানে এখনো ইউক্রেনের টেকনিশিয়ানরা কাজ করছেন।
সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আশপাশে একে অপরের দিকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া। এ জন্য তারা একে অপরকে দোষারোপও করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানিয়েছে, বোমা হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ ব্যক্তি আহত হয়েছে এবং ৩টি তেজস্ক্রিয় সেন্সর ক্ষতিগস্ত হয়েছে।
রোববার (৭ আগস্ট) রুশ বার্তা সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়েছে, পরমাণু কেন্দ্রের একটি সক্রিয় চুল্লির ৪০০ মিটারের কাছে এই বোমা পড়েছে। এতে প্রশাসনিক ভবনের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ক্লাস্টার বোমা দিয়ে ওই পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। একই দিন রাশিয়ার বিরুদ্ধেও জাপোরিঝিয়ায় হামলার অভিযোগ করে ইউক্রেন।
এনারোঅ্যাটম প্রধান পেত্রো কোটিন বলেন, এখন যা করা দরকার তা হলো, ওই স্থাপনা থেকে দখলদার বাহিনীকে সরিয়ে দেয়া এবং সেখানে একটি অসামরিক জোন প্রতিষ্ঠা করা।
এক বিবৃতিতে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাস্তবতা হচ্ছে ওই এলাকায় তাদের (রুশ সেনা) উপস্থিতি সামনের দিনগুলোতে সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে আছে। সেখানে দুর্ঘটনাক্রমে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি পারমাণবিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে।
এরই মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে সতর্ক করা হয়েছে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, পারমাণবিক প্লান্টে কোনোরকম হামলা হলে তা ‘আত্মঘাতী ব্যাপার’ হবে। তিনি জাপোরিঝিয়ায় জাতিসংঘ পরিদর্শকদের ঢুকতে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
এর আগে এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছিলেন, ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশে সামরিক হামলার ঘটনায় তিনি ভীষণ উদ্বিগ্ন। এ হামলা ইউক্রেনকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো জাপোরিঝিয়া। সারা বিশ্বে যে ১০টি বড় পরমাণু স্থাপনা রয়েছে এটি তার একটি। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরুর দিকেই জাপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ চুল্লি দখল করে রুশ বাহিনী।
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply