1. [email protected] : @nexttech :
  2. [email protected] : SM Solaiman : SM Solaiman
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

স্বদেশে বঙ্গবন্ধুঃ প্রতীক্ষার হলো অবসান

হুমায়ুন কবির
  • Update Time : সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২
  • ৬২০ Time View
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনমানসে তীব্র আকাঙ্ক্ষা নেতা ফিরে আসুন তাদের মাঝে অতি দ্রুততার সাথে। কিন্তু নেতা যে বন্দি পাকিস্তানের কারাগারে।মুক্ত না হয়ে কেমন করে আসবেন তিনি তাঁর আজন্ম লালিত স্বাধীন বাংলাদেশে?
আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী কিছু রাষ্ট্রনেতা ব্যতীত সারা বিশ্বের নেতৃবৃন্দের দাবী শেখ মুজিবকে অবিলম্বে মুক্ত করে দেয়া হোক। এমনকি আমাদের বিরোধীতাকারী মুষ্টিমেয় দেশগুলোর বেশিরভাগ জনগণেরও একই দাবী।এমন যখন বিশ্ব পরিস্থিতি, পাকিস্তানের নতুন শাসক জুলফিকার আলী ভূট্টো কি পারবেন বঙ্গবন্ধুকে আটকে রাখতে? পারবেন না, কারণ ভূট্টো নিজেও পথ খুঁজছেন কেমন করে নিজেদের সম্মান রক্ষা করে শেখ মুজিবকে মুক্ত করা যায়।
অতিশয় ধূর্ত ভূট্টো শেখ মুজিবের মুক্তির প্রশ্নে নিজে দায়িত্ব না নিয়ে তাঁর দেশের জনগণের মতামত চান। ০৪ জানুয়ারী, ১৯৭২ করাচীর এক জনসভায় তিনি জানতে চাইলেন মুজিবকে মুক্ত করে দেয়া হবে কি না। জনসভার হাজারো মানুষ হাত উঁচিয়ে তাদের সম্মতির কথা জানালো।ভূট্টো বললেন তাদের সম্মতিতে তাঁর কাঁধ থেকে যেনো বিরাট এক বোঝা নেমে গেলো। এখন মুজিককে মুক্ত করে দিতে আর কোনো বাঁধা থাকলো না। এ খবর বিবিসি থেকে ফলাও করে প্রচারিত হলো। দেশি বিদেশি পত্র পত্রিকায়ও তা ছাপা হলো। আমরা আশ্বস্ত হলাম বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরছেন। কিন্তু কবে? জনগণের যে আর তর সইছে না।
০৮ জানুয়ারী, ১৯৭২, বিবিসি’র খবরে জানা গেলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিশেষ বিমান পাকিস্তান ছেড়ে লন্ডনের উদ্দশ্যে যাত্রা করেছে। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এর প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়।আনন্দে উল্লসিত জনগণ। ফাকাঁ গুলির আওয়াজে পুরো ঢাকা শহর প্রকম্পিত। শ্লোগানে শ্লোগানে অলি গলি রাজপথ মুখরিত।
নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছানো, সেখানে সংবাদ সম্মেলন, ব্রিটিশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত, লন্ডনে বসবাসরত বাঙ্গালীদের সাথে মতবিনিময়, লন্ডন থেকে রাজকীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে করে দিল্লীর পথে যাত্রা, দিল্লিতে রাজকীয় সম্বর্ধনা, এসব খবরই পাচ্ছিলাম আমরা রেডিও বুলেটিনের মাধ্যমে।
এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১০ জানুয়ারী দ্বিপ্রহরে বঙ্গবন্ধু এসে পৌঁছাবেন তেজগাঁও বিমানবন্দরে।সেখান থেকে সরাসরি আসবেন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), ভাষণ দেবেন জনতার উদ্দশ্যে।
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে প্রথম বারের মতো পা রাখছেন মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে, কথা বলবেন নিপীড়িত জনতার সামনে। স্বভাবতই এমন সভায় উপস্থিত হওয়া আমার কাছে অপরিহার্য বলে মনে হয়েছিল।বেলা এগারোটায় এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হলাম সভাস্থলে।
বিশাল রেসকোর্স ময়দানের ধারণ ক্ষমতা কতো ঠিক বলতে পারবো না। তবে সেদিন স্বচক্ষে যা দেখেছিলাম তা ছিল অবিশ্বাস্য। পুরো ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ, আশেপাশের রাস্তাসমূহও লোকে লোকারণ্য। বহু কষ্টে মাঠের এক কোনে স্থান করে নিতে পেরেছিলাম। রাজকীয় বিমান বাহিনীর কমেট বিমানটি যখন ঢাকার আকাশে দেখা গেলো রেসকোর্স ময়দানের লক্ষ লক্ষ জনতা যেনো উল্লাসে ফেটে পড়লো। শ্লোগান শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরো ময়দান।
জনতার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা, কখন নেতার দেখা পাবেন তারা। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দানে আসতে সময় লেগে গেলো তিন ঘণ্টা। কারণ নেতাকে দেখার জন্য বিমানবন্দর ও পুরো রাস্তা জুড়ে ভিড় করে আছে হাজারো জনতা। নেতা আসলেন, দৃপ্ত পদক্ষেপে মন্চে আরোহণ করলেন। দীর্ঘ নয় মাসেরও বেশি সময় পর জনগণ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে দেখতে পেলেন, তাদের প্রতীক্ষার অবসান হলো। তারা শোনতে থাকলেন বঙ্গবন্ধুর আবেগাপ্লুত ভাষণ।
দিনটি ছিল আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও স্মরণীয় একটি দিন।
হুমায়ুন কবির
লেখক অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা
ঢাকা, ১০,০১,২০২২

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2022
কারিগরি সহায়তা: Next Tech