1. [email protected] : @nexttech :
  2. [email protected] : SM Solaiman : SM Solaiman
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন

রান্নাঘরেই কেটে যায় বাঙ্গালি নারীর জীবন যৌবন

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২
  • ৬১০ Time View
বাঙ্গালি মহিলারা গড়ে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় প্রতিদিন রান্নাঘরে
এ্যাভারেজ আমেরিকান মহিলারা মাত্র সাতাশ মিনিট আর বাঙ্গালি মহিলারা গড়ে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় প্রতিদিন রান্নাঘরে ব্যয় করে। বাংগালী নারীদের জীবনের বিশাল অংশ এই রান্নাঘরেই কেটে যায়। কয়েকসপ্তাহ আগে আমার প্রতিবেশী হ্যারল্ডের বাসায় আমাদের ডীনারের দাওয়াত ছিলো। সন্ধ্যা ছটার আগেই সাধারণত এরা ডীনার শেষ করে। একেবারে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ছটা বাজেই ডীনার শুরু হলো। ডীনারের আয়োজন ছিলো টুনা ফীস, সালাদ, কিছু চিপস আর কোমল পানীয়। ব্যস । হ্যারল্ডের ওয়াইফ ম্যারি আর হ্যারল্ড আমাদের সাথে ক্লান্তিহীন আড্ডা দিলেন। রান্নার আয়োজন যেহেতু কম-আড্ডার আয়োজনতো সুন্দর হবেই। বুঝলাম , নিমন্ত্রন মানে শুধু ভোজন না। নিমন্ত্রণ হলো আপনার জীবনের কিছু অংশ আর আমার জীবনের কিছু অংশ একসাথে পাশাপাশি বসে উপভোগ করা।
কেউ যদি বলে বাংগালীরা আড্ডা প্রিয়। কথাটি ভুল। আমরা আসলে ভোজনপ্রিয়। আমাদের বাসায় কারো দাওয়াত মানেই বিশাল রান্নার আয়োজন। কে কত আইটেম বাড়াতে পারে ভাবীদের সাথে ভাবীদের চলে এর প্রতিযোগিতা। যেদিন অতিথিদের নিমন্ত্রণ বলতে গেলে এর এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। একেকটা রান্নার আয়োজন একেকটা ঘুর্ণিঝড়। এরকম ঘুর্ণিঝড়ের ভিতর সময় পার করে ঘরের বউ, ভাবী ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। সুতরাং সুন্দর পরিবেশে বসে আড্ডাটা হবে কখন?
রান্নাঘর আর বাথরুম দেখে মানুষের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়। হ্যারল্ডের ঘরে পা দিয়েই বুঝা গেলো- কত সুন্দর, পরিপাটি আর কত পরিচ্ছন্ন হতে পারে একটি ঘরের পরিবেশ। সুন্দর ঘর রাখার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- ওদের রান্নার আয়োজন খুবই কম। আপনি যখন গরম তেলের ওপর দুনিয়ার নানা রকমের মশলা ছাড়বেন- সাথে সাথেইতো ঘর গ্রীজি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিবে। আর এই তৈলাক্ত গ্রীজ শুধু আপনার কিচেন নষ্টই করছেনা। আপনার উদরও নষ্ট করছে।
তবে কি আমেরিকানরা রান্না করেনা। না করলে এতো গ্রোসারি আইটেম যায় কই । জ্বি করে। বেশ আয়োজন করেই করে। তবে একদিনে চৌদ্দ পনের পদ তৈরি করে- ডাইনিং টেবিলের এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেনা। আমি নিজেও বুঝিনা। এতো পদ দিয়ে একসাথে খাবার খেয়ে এতো ভূরিভোজনের দরকারটাই বা কি? কালকে মারা গেলে- আজকে বেশ করে খেয়ে নেন ঠিক আছে। কিন্তু তাই যদি না হয়- তবে আজকে দুপুরে এক আইটেম দিয়ে খান। রাতের বেলা আরেকটা দিয়ে খান। এভাবে প্রতিদিন একেকটা আইটেম দিয়ে খেলেইতো নানা রকমের খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়।
আমাদের পিকনিক মানেই ঐ খাবার দাবার। গাড়ীতে খাবার ঢুকাও, গাড়ী থেকে খাবার নামাও, খাবার সাজাও, খাবার রান্না করো, খাবার পরিবেশন করো, খাবারের পর এবার তালা, বাসন, বাটি, ঘটি গাড়িতে তোল। ব্যস খাবারের আয়োজনের ভিতরই পিকনিক শেষ । একবার সমূদ্র দর্শন করতে গিয়ে দেখলাম- এক আমেরিকান কী সুন্দর করে ফোল্ডিং চেয়ার খোলে পানিতে পা ভিজিয়ে বসেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যায়। সে বসা। তার মাথার ওপর ছাতা। পাশে একটা ড্রিংক। বুঝা গেলো সে আজ মন প্রাণভরে সমূদ্র দেখবে। আর আমরা- খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সমূদ্র দেখলাম। আর সমূদ্র দেখার পাশাপাশি এই দোকানে ঢু মারলাম, আরেক দোকান থেকে বের হলাম, একটু এদিক ওদিক ঘুরলাম, রাজনীতি, কম্যুনিটি নীতি, ট্রাম্প, মোদি, গদি, হাসিনা, খালেদা, পাপিয়া, সাফিয়া,কাদেরি , তাহেরি সহ দুনিয়ার সব বিষয়ে বিপুল আলোচনা, হালকা বাক বিতণ্ডা, ঝাপসা মনোমালিন্য নিয়ে সমূদ্র জয়ের পাশাপাশি দুনিয়া জয় করে ঘরে ফিরলাম।
গত শনিবার। গ্রোসারি কিনতে যাবো। দেখি হ্যারল্ড। সেও আমার সাথে যাবে। আমাদের গ্রোসারির লিস্টি মাশাল্লাহ- এইগুলো একটার সাথে আরেকটা জোড়া লাগালে- চাঁদের দেশে যাওয়া যাবে। মাংসের জন্য এক দোকান, মাছের জন্য আরেক দোকান। সব্জির জন্য ফার্মাস মার্কেট। সেখানে আবার দেশি লাউ পাওয়া যায়না। যাও আরেক দোকান। কাঁচামরিচের জন্য আরেক জায়গায়। দুধ-ডিমগুলো আবার এইসব দোকানে ভালো পাওয়া যায়না। যাও আমেরিকান গ্রোসারিতে। বিশাল লিস্টের যুদ্ধ শেষ করে যখন ফিরছি- হ্যারল্ড বললো- একটু দাঁড়াও। এক ফাস্টফুডের দোকানে দাঁড়ালাম। হ্যারল্ড একটা স্যান্ডউইচ কিনলো। স্যান্ডউইচের অর্ধেক সে খাবে। বাকি অর্ধেই ওর বউয়ে খাবে। ঝামেলা শেষ। সেইজন্য ওরা নাসা থেকে স্পেসে যায়। আর আমরা বেডরুম থেকে কিচেন আর কিচেন থেকে বেডরুমে যাই। আর, এর ফাঁকে ফাঁকে ইয়া বড় বড় ভুড়ি বানাই। স্পেশ স্টেশানে যাওয়ার সুযোগ আসলে আমরা খোঁজ নিবো- কিমার জন্য ফ্রেশ গ্রাউন্ড বীফ, কাচ্চি বিরিয়ানির মশলা, ডালের জন্য পাঁচফোড়ন, খাওয়ার পর গোলাপজামুন, চায়ের সাথে বিস্কুট, পানের সাথে চুন, খয়ের এসব কিছু সেখানে ঠিকঠাক পাওয়া যাবেতো?
আমি একটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করলাম। যার গ্রোসারির ট্রলি যত বড়- মেধা আর যোগ্যতায় সে তত ছোট। যারা দরিদ্র-অর্থের অভাবে খেতে পায়না-সেটা ভিন্ন কথা। মেক্সিকান আর আমাদের গ্রোসারির ট্রলিগুলো যেন একেকটা মুদির দোকান। চেকআউট লেনে দাঁড়ালে মনে হয় কোনো ছোট দোকান ঘরের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি। এতো বেশি বেশি খাবার উদরে যায় বলে আমাদের মগজে আর বেশী কিছু যায়না। হিসপানিক আর ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকায় আপনি কোনো ভালো লাইব্রেরি কিংবা কোনো ভালো বইয়ের দোকান পাবেন না। এগুলো পাবেন শুধু সাদা বিশেষ করে ইহুদি অধ্যুষিত এলাকায়। রান্না করে আর খেয়েইতো আমাদের জীবন শেষ। অধ্যাবসায়ের অতো সময় কোথায়? বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস ওনাদের সামনে কোনোদিনও ইয়াবড় খাবারের প্লেট দেখিনি। যেমন দেখেছি-রাজা-বাদশাহ-আমীর ওমরাহদের সামনে।
প্রিয় ভাই, চাচা, বাবা, দাদারা দয়া করে বউ, ভাবি, বোন, চাচী, মাসিদের রান্নাঘরের একচেটিয়া জীবন থেকে মুক্তি দিন। আর ভাবী, আপা আপনারাও একজনের সাথে আরেকজনের রান্নার আইটেম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা থেকে দয়া করে নিজেদের হেফাজত করুন। এক জনে পাঁচজনের জন্য প্রতিদিন পাঁচপদ রান্না না করে পাঁচজনে মিলে একপদ রান্না করুন। সম্পর্ক বাড়বে। ভালোবাসা তৈরি হবে। কষ্ট লাঘব হবে। কিচেনে আপনার সময় যত বাড়বে- ভাইয়ের ভুড়িও তত বাড়বে। আর এই ভুড়ি ভালোবাসা না। এটা সর্বনাশা। এটা জীবননাশা। জীবন ধারনের জন্য খেতেতো হবেই। কিন্তু রান্নাঘর আর ভোজন যেন আমাদের পুরো জীবনটাই খেয়ে না ফেলে- দয়া করে সেদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন। সারাজীবন নারীমুক্তি নারীমুক্তি করলাম। কিন্তু নারীকেতো রান্নাঘর থেকেই মুক্তি দিতে পারলাম না।
সংসার আর জীবনের বাতিঘর সব নারীদের জন্য বিশ্ব নারী দিবসে হৃদয়ের গভীর থেকে রইলো বিশুদ্ধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
সংগৃহিত ঃ ফেসবুক পেজ, জুলকার হায়দার

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2022
কারিগরি সহায়তা: Next Tech