পাকিস্তানি সহকর্মীর হাতে প্রাণ গেল বাংলাদেশির

অনলাইন প্রতিবেদন:

মালদ্বীপে এক বাংলাদেশি যুবককে হত্যা করেছেন তার পাকিস্তানি সহকর্মী। নিহত মো. শাহিন (২৯) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চানপুর গ্রামের মো. কুদ্দুস মিয়ার ছেলে। তিনি মালদ্বীপের হুলেমালেতে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন।

মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিস বলছে, তারা শনিবার সন্ধ্যায় হামলার খবর পান। হামলাকারী ২৬ বছর বয়সী পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আবিদ। তিনি খানজি রেস্টুরেন্টে বাবুর্চি। ভিকটিমকে ধারালো ছুরি দিয়ে একাধিকবার আঘাত করা হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অধিক ইনজুরির কারণে তিনি মারা যান।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার হুলেমালের খানজি রেস্টুরেন্টে ইফতার তৈরির সময় শাহিনের সঙ্গে পাকিস্তানি শেফ আবিদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শাহিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন আবিদ। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর পাকিস্তানি শেফ আবিদ পালিয়ে গেলেও মালদ্বীপ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে মালদ্বীপের হুলেমালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মিছিল বের করলে সেই মিছিল থেকে ৫ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।

এই ঘটনার জন্য মালদ্বীপে পাকিস্তান হাইকমিশনার অফিস থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খানজি রেস্টুরেন্টে ওয়েইটার হিসেবে কাজ করতেন বাংলাদেশি ওই অভিবাসী।

স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, মোঃ শাহিন কয়েক বছর আগে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মালদ্বীপে আসেন, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী হুলেমালে সিটিতে খানজি রেস্তোরাঁয় বাবুর্চি কাজ করেন। শনিবার সন্ধা ৭টার দিকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সহকর্মী আবেদ তার মুখে এবং পেটে ছুরিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

শনিবার সন্ধায় তার মৃত্যুর বিষয়টি গ্রামের বাড়িতে জানাজানি হলে শুরু হয় আহাজারি। তার গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে তার ভাই আবদুল হক বলেন, শাহিনের মৃতদেহ দেশে পাঠানো সহ দ্রুত সুষ্ঠু বিচার চান। খবর পেয়ে স্থানীয় চানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিনের বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা দেন তার পরিবারকে। চানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা দেই। তার মরদেহ আনার বিষয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এ ব্যাপারে মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের প্রথম সচিব মোঃ সোহেল পারভেজ বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি এবং দেখেছি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কাগজপত্র পাইনি মোঃ শাহিনের। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে পাকিস্তান হাইকমিশনার এর সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং পাকিস্তান হাইকমিশনার আশ্বস্ত করেছেন যে দ্রুত তদন্ত করে দোষীকে বিচারের আওতায় আনা হবে। দূতাবাসের পক্ষ্য থেকে বলা হয় নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান এর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

মৃত মোঃ শাহিন পাঁচ বছর আগে মালদ্বীপে আসেন, তিনি আনডকুমেন্টেড হিসেবেই রাজধানীর পার্শ্ববর্তী হুলেমালে সিটির খানজি রেস্তোরাঁয় বাবুর্চি কাজ করতেন। কিছু দিন আগে বৈধ হওয়ার জন্য খানজি রেস্তোরাঁর মালিকের সাথে কনট্যাক্ট পেপারে সাইনও করেন প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যাওয়ার আসায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক শাহিনের আর দেশে ফিরে হলো না।

এটিভি বাংলা/তুষার


Posted

in

,

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *