‘গ্রিন কার্ড মানেই নাগরিকত্ব নয়’

ডেস্ক রিপোর্ট :
অ্যামেরিকান সরকার কোনো অভিবাসীর অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি ঠিক করার পর গ্রিন কার্ড বাতিলের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি কয়েকটি উপায়ে সরকারের নজরে আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ইমিগ্রেশন চেক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত কিংবা হুইসেলব্লোয়ারদের তথ্য।

গাজায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিক্ষোভে সামনের সারিতে থাকা ফিলিস্তিনি অ্যাকটিভিস্ট মাহমুদ খলিলকে গত ৮ মার্চ গ্রেপ্তার করেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস এজেন্টরা। ২০২৪ সাল থেকে অ্যামেরিকার বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও খলিলের এ গ্রেপ্তারে প্রশ্ন উঠেছে গ্রিন কার্ডের সীমাবদ্ধতা নিয়ে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন পরিস্থিতিতে গ্রিন কার্ড বাতিল হতে পারে, তা জানিয়েছে ভয়েস অব অ্যামেরিকা।

কেন

নিউ ইয়র্কভিত্তিক অভিবাসন আইনজীবী লিন্ডা ডেইকিন-গ্রিম ভয়েস অব অ্যামেরিকাকে জানান, গ্রিন কার্ড বাতিল হতে পারে।

তিনি বলেন, বাতিলের ঘটনা সচরাচর না ঘটলেও এটি বিরল নয়। প্রায়শ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে লোকজন গ্রিন কার্ড হারান।

এ আইনজীবী বলেন, ‘একটি গ্রিন কার্ড মানেই নাগরিকত্ব নয়।’

তার ভাষ্য, এ কার্ডকে বিশেষ সুবিধা হিসেবে দেখা হয়, যা অর্জন করে নিতে হয়, তবে গ্রিন কার্ডধারীরা যেসব শর্তের অধীনে থাকেন, সেগুলোর পরিপন্থি আচরণ করলে গ্রিন কার্ড হারাতে পারেন।

যেসব কারণে গ্রিন কার্ড বাতিল হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদক সংক্রান্ত অপরাধ, প্রতারণা কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ থাকার মতো জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ। এ ছাড়া গ্রিন কার্ডধারীকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করা হলেও তিনি বৈধ স্থায়ী বসবাসের যোগ্যতা হারাতে পারেন।

অ্যামেরিকার আইন অনুযায়ী, কোনো গ্রিন কার্ডধারী অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাদের ফৌজদারি মামলা বিচার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাবে, তবে তাদের স্থায়ী বসবাসের মর্যাদা বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে অভিবাসন আদালতে। সেখানে গ্রিন কার্ড বাতিলের স্বপক্ষে অবশ্যই তথ্যপ্রমাণ জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

কীভাবে

অ্যামেরিকান সরকার কোনো অভিবাসীর অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি ঠিক করার পর গ্রিন কার্ড বাতিলের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি কয়েকটি উপায়ে সরকারের নজরে আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ইমিগ্রেশন চেক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত কিংবা হুইসেলব্লোয়ারদের তথ্য।

আইনজীবী ডেইকিন-গ্রিম বলেন, তাত্ত্বিকভাবে কোনো হুইসেলব্লোয়ার তার কাছে থাকা তথ্য স্টেইট ডিপার্টমেন্ট বা আইসের হটলাইনে জানাতে পারে।

সাধারণত গ্রিন কার্ড বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। গ্রিন কার্ডধারীরা সাধারণত অভিবাসন আদালতে হাজির হতে নোটিশ হিসেবে পরিচিত একটি নথি পান। মারাত্মক ক্ষেত্রে তাদের গ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করা হতে পারে।

হোয়াইট হাউযের কর্মকর্তারা জানান, কোনো ব্যক্তির কর্মকাণ্ড পররাষ্ট্রনীতিতে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা থাকলে তার গ্রিন কার্ড বাতিলের এখতিয়ার আছে সেক্রেটারি অব স্টেইট মার্কো রুবিওর।

মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার নিয়ে রুবিও বলেন, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় নয়।

মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তারের মতো ঘটনায় সেক্রেটারি অব স্টেইটের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট। ওই আইনের একটি একটি বিধান অনুযায়ী, নাগরিকত্ব না পাওয়া কোনো ব্যক্তি অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থ উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন মনে হলে তাকে বিতাড়নযোগ্য ভাবতে পারেন সেক্রেটারি অব স্টেইট।

মাহমুদ খলিলের নোটিশ টু অ্যাপিয়ার-এনটিএ অনুযায়ী, রুবিও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের বিধানটি কাজে লাগিয়েছেন।

আইনি প্রতিকার

অভিবাসন আদালতে গ্রিন কার্ড বাতিলের স্বপক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের ভার সরকারের। অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেছেন, এমনটি অবশ্যই দেখাতে হবে সরকারকে।

মাহমুদ খলিলের মতো ঘটনায় আইসের অ্যাটর্নিরা বিতাড়নের অনুরোধ করলে তাদের এটা প্রমাণ করতে হবে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

গ্রিন কার্ডধারীরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিতে পারেন।

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি অ্যাটর্নির ব্যয় বহন করতে না পারলে সরকারকে অবশ্যই আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে।

অভিবাসন আদালতে নিজস্ব আইনজীবী পাওয়ার অধিকার আছে অভিবাসীদের, তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে আইনজীবী দিয়ে সহায়তার বাধ্যবাধকতা নেই।

এমন বাস্তবতায় আইনজীবীর ব্যয় বহন করতে না পারলে কিংবা তার পক্ষে লড়ার মতো আইনজীবী না পেলে আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগ হারাবেন অভিবাসীরা।

আইনজীবী ডেইকিন-গ্রিমের মতে, অভিবাসন আদালতের প্রক্রিয়া কখনও কখনও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হতে পারে, তবে এটি একই সঙ্গে জটিল।

অভিবাসন আদালত ব্যবস্থায় গ্রিন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ। এক্সিকিউটিভ অফিস ফর ইমিগ্রেশন রিভিউ নামের একটি অফিসের অধীনে এটি পরিচালনা করে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস।

এ বিষয়ে আইজীবী ডেইকিন-গ্রিম বলেন, বিষয়টি এমন যে, সরকার একই সঙ্গে বিচারকর্ম পরিচালনা এবং বিচারকের ভূমিকাও পালন করে।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *