ইমিগ্রান্ট বিরোধী অভিযানে স্টুডেন্ট ভিসাধারীদের অধিকার ও ঝুঁকি

ডেস্ক রিপোর্ট :
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্র্বাচনী প্রচারভিযানে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট বা বহিস্কার করা। তার এ কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে কেবল অবৈধ ইমিগ্রান্ট নয়, অনেক বৈধ ইমিগ্রান্ট, গ্রিনকার্ডধারী এবং বৈধভাবে পড়াশোনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে আগত অনৈক বিদেশি ছাত্রকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটিতে। ছাত্রদের মধ্যে যারা তাদের ভিসার শর্ত কোনোভাবে ভঙ্গ করেছেন, ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা ‘আইস’ অণুসন্ধান করছে।

ইতোমধ্যে একজন বাংলাদেশী ছাত্র, যিনি তার পড়াশোনার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিলেন ‘আইস’ তাকে আটক করেছে। প্রায় সকল কমিউনিটিতে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারতীয় উপমহাদেশের ইমিগ্রান্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভীতির মধ্যে আছেন ভারতীয়রা।

ইতোমধ্যে কয়েকশত ভারতীয়, যারা অবৈধভাবে আমেরিকায় ছিলেন, বা ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন, তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা যেসব ছাত্রদের তাদের আটক তালিকায় রেখেছেন, তাদের পক্ষে আইনি লড়াই লড়ে যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে যাওয়ার চেষ্টায় সফল হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবান প্ল্যানিং এ ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে অধ্যয়নরত ভারতীয় নাগরিক রঞ্জনি শ্রীনিবাসনের স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করায় তিনি পালিয়ে কানাডা যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাকে সর্বশেষ গত ৭ মার্চ তার ক্যাম্পাস অ্যাপার্টমেন্টে দেখা গেছে।

এর দুই সপ্তাহ পর ম্যাসাচুসেটস এর সোমারভিলে টাফটস ইউনিভার্সিটির এক ব্যাচেলর শিক্ষার্থী তুরস্কের নাগরিক রুমাইসা ওজটুর্ককে একটি ডানপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে ফেডারেল হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেমিটিক বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই ঘটনাগুলো এবং আরো অনেক ঘটনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রান্ট ডিপোর্টেশন উদ্যোগের প্রায় প্রাত্যহিক চিত্রের ক্ষুদ্র অংশ। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি ছাত্রদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার জন্য ভিসা প্রদানে আরো কড়াকড়ি আরোপ করবে, অর্থ্যাৎ কর্তৃপক্ষ এটা নিশ্চিত করতে চাইবে যে, বিদেশি শিক্ষার্থী যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসবে, তারা পুরো সময় কেবল শিক্ষাকার্যক্রমেই নিয়োজিত থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা আইস এর টার্গেটে পরিণত হওয়ায় তারা ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় কাটাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদদের একটি অলাভজনক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটরস ‘নাফসা’র নির্বাহী পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী ফ্যান্টা আও বলেছেন, “বিদেশি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। তারা উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেকেই প্রশ্ন করছেন,‘ আমার কি এদেশে থাকা উচিত? এতটা অনিশ্চয়তা জানার পরও কি আমি এখানে থাকব, নাকি আমার পক্ষে নিজ দেশে চলে যাওয়াই উত্তম??’ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসার অধিকার অনুযায়ী তাদের যে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা সত্বেও অনেক ক্ষেত্র আছে ফেডারেল সরকার যখন তখন তাদের ভিসা প্রত্যাহার করে নিতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসা কি? : যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিদেশি ছাত্রদের প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে এফ ১ ভিসা প্রদান করে, যা স্টুডেন্ট ভিসা নামেই বহুল পরিচিত। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশিরা ভর্তি হচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের ভর্তির শর্ত পূরণ ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদনকারী বিদেশি ছাত্রের ভিসার জন্য ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে তাদের নিয়মমাফিক ভিসা প্রদানের সুপারিশ করার পর সংশ্লিষ্ট দেশে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট থেকে ভিসা ইস্যু করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সব সুপারিশ রক্ষা করা হয় এমন নয়। অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা অনুমোদন করে না ফেডারেল সরকার।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


Posted

in

,

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *