রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে এশীয় নেতাদের এক হতে হবে : ড. ইউনূস

ডেস্ক রিপোর্ট :
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এশীয় নেতাদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক। এই বিশাল সংখ্যক শরণার্থীর আশ্রয়দানে বাংলাদেশ বড় ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভার বহন করছে। এই পরিস্থিতিতে এশিয়ার নেতাদের একত্রিত হয়ে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে।

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ গত বছরের জুলাই-আগস্টে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। যুব সমাজ এবং নাগরিকরা দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনে দৃঢ়তা দেখিয়েছে। জনসাধারণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে, দেশের মৌলিক রূপান্তর ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়া।

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রগতি মন্থর হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলোর এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতি বছরে ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া এশিয়ার অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের জন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন।

দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহের শিকার হয়েছে। ঠিক একই কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায়। এশিয়ার দেশগুলোকে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং ফিরিয়ে আনার জন্য মাল্টিল্যাটারেল প্রক্রিয়া স্থাপন করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা খাদ্য নিরাপত্তা, শক্তি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট মানবজাতির জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকি এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।

কোভিড-১৯ মহামারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তির সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এশিয়াকে মহামারি চুক্তির আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ডেটা-চালিত প্রযুক্তি, রোবোটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে এশিয়াতে নারীদের শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার প্রতি জোর দেন।

গাজায় গণহত্যা, ইউক্রেনের উত্তেজনা ও মিয়ানমারের সংকটের মতো বিষয়গুলোও উত্থাপন করেন ড. ইউনূস।

এটিভি বাংলা/ হৃদয়


by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *