ডেস্ক রিপোর্ট :
গাজায় সংঘাতের সময় নারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালিয়েছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে যুদ্ধ কৌশল হিসেবে যৌন সহিংসতা চালিয়েছে দেশটির সেনারা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এ কথা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি পক্ষপাতদুষ্ট ও ইহুদি-বিদ্বেষী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস কর্তৃক সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের ওপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে জাতিসংঘ আবারও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি আক্রমণকে বেছে নিয়েছে।’
পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং ইসরায়েলের জন্য গঠিত জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শিশু জন্ম রোধের উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ করে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রজনন ক্ষমতা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে, যা রোম সংবিধি ও গণহত্যা কনভেনশন অনুযায়ী গণহত্যার একটি ধরন।’
কমিশন বলেছে, চিকিৎসা সরবরাহের সীমিত প্রবেশাধিকারের কারণে মাতৃমৃত্যুর বৃদ্ধি ছাড়াও এই পদক্ষেপগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের অভিযানে জোরপূর্বক জনসাধারণের পোশাক খুলে বিবস্ত্র এবং যৌন সহিংসতা চালায় বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই সপ্তাহে জেনেভায় কমিশন কর্তৃক অনুষ্ঠিত একাধিক শুনানিতে গাজার একজন স্বাস্থ্যকর্মী, যাকে নিরাপত্তার স্বার্থে শুধু সাইদ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাকে অপহরণ করেছে এবং জনসমক্ষে তার অন্তর্বাস খুলে ফেলতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, বন্দি থাকাকালে তার যৌনাঙ্গে পেটানো হয়েছে।
ইসরায়েল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় জেনেভায় জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
২০২৪ সালের জুনে কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
গত বছরের মার্চে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি দল বলেছে, জঙ্গিগোষ্ঠীর আক্রমণের সময় বেশ কয়েকটি স্থানে ধর্ষণসহ যৌন সহিংসতার ‘যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ’ রয়েছে।
ইসরায়েল গণহত্যা কনভেনশনের সমর্থক এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। দেশটি রোম সংবিধির পক্ষ নয়, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত পৃথক মামলার রায় দেওয়ার এখতিয়ার দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকা গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলা দায়ের করেছ
হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে প্রবেশ করে আক্রমণ চালায়। এতে গাজায় একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে, যাতে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই হামলায় হামাস যোদ্ধারা ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে।
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply