ডেস্ক রিপোর্ট :
দুই দশকের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতির সংখ্যা এক-পঞ্চমাংশের বেশি কমে গেছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। নিউ ইয়র্কের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই কীট কমেছে ২২ শতাংশ। বিবিসি লিখেছে, এক তৃতীয়াংশ প্রজাতি মারাত্মকভাবে কমেছে, জুলিয়া’স স্কিপারের মতো প্রজাতিরা তাদের সম্প্রদায়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি হারিয়েছে।
তবে গবেষকরা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হলে প্রজাপতিরা আগের অবস্থায় ফিরতে পারে। ‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এ গবেষণায় প্রজাপতির ‘প্রাচুর্য’ দেখা হয়- যা সুনির্দিষ্ট এলাকায় একটি প্রজাতির সংখ্যা নির্দেশ করে। ৩৫টি পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির ৭৬ হাজার জরিপ থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ প্রজাপতি দেখা গেছে।
এর মধ্যে নর্থ আমেরিকান বাটারফ্লাই অ্যাসোসিয়েশনের ‘ফোর্থ অব জুলাই কাউন্ট’র মতো নাগরিক বিজ্ঞান কর্মসূচির উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পরিসংখ্যানগত মডেল ব্যবহার করে তারা ৩৪২ প্রজাতির প্রজাপতি সংখ্যার প্রবণতা বোঝার চেষ্টা করে।
তাতে দেখা যায়, ৩৩ শতাংশ প্রজাতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে; আর ১০৭টি প্রজাতির ক্ষেত্রে কমার হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক এলিজা গ্রেইমস বলেন, “এই ফলের সঙ্গে বৈশ্বিক প্রবণতার মিল থাকলেও এত বড় আকারের পতন হতাশাজনক।”
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ফ্লোরিডা হোয়াইট, হার্মিস কপার, টেইল্ড ওরেঞ্জ, মিচেল’স স্যাটার ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া হোয়াইট- এই সব প্রজাতি যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ৯৮ শতাংশরেও বেশি করে। একসময় বাড়ির উঠানে যে প্রজাপতিকে দেখা যেত, সেই ওয়েস্ট কোস্ট লেডি কমেছে ৮০ শতাংশ। অত্যধিক অভিযোজন ক্ষমতা থাকার পরও এই প্রজাতির হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।
অধ্যাপক গ্রেইমস বলেন, “এই প্রবণতা উদ্বেগজনক, কারণ এতে বোঝা যায় সাধারণ প্রজাপতিও নিরাপদ নয়।” গবেষকরা বলছেন, মোটাদাগে আবাসস্থল কমে যাওয়া, কীটনাশকের ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। প্রজাপতিকে গুরুত্বপূর্ণ পরাগায়নকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা উদ্ভিদ ও ফসলের বংশবিস্তারে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের সংখ্যা কমায় খাদ্য উৎপাদন এবং পুরো বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হতে পারে।
তারা পরিবেশগত স্বাস্থ্যের সূচক হিসেবেও কাজ করে – যখন প্রজাপতির সংখ্যা কমে, তখন তা অন্য জীবের জন্যও সমস্যা তৈরি করে।
ক্ষতি বেশি দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে
গবেষকরা বলছেন, প্রজাতি সবচেয়ে বেশি কমছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, যেটিকে অন্যতম উষ্ণ ও শুষ্কতম অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ক্ষতির পেছনে খরার বড় অবদান থাকতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
“খরা হচ্ছে দ্বিগুণ হুমকি- এটি সরাসরি প্রজাপতির ক্ষতি করে এবং তাদের খাদ্য এবং পোষক উদ্ভিদকেও প্রভাবিত করে,” ব্যাখ্যা করছিলেন অধ্যাপক গ্রেইমস। গবেষণার ফলগুলো প্রজাতি সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেই ফল ধরে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন যেমন হুমকিগ্রস্ত প্রজাতির লাল তালিকা হালনাগাদ করতে পারে, তেমনই প্রজাতি সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র বিপন্ন প্রজাতি আইন ব্যবহার করতে পারে।
প্রজাপতির সংখ্যায় বড় পতন হলেও পুনরুদ্ধারের আশা রয়েছে। অধ্যাপক গ্রেইমস বলেন, “প্রজাপতি দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে পারে, কারণ তাদের প্রজন্ম সময় কম। বুনোফুল রোপণ, কীটনাশকের ব্যবহার কমানো, এমনকি বাড়ির উঠোনের কিছু অংশ ফাঁকা রাখার মতো ছোট ছোট পদক্ষেপে তাদের বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।”
সরকারের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন তিনি। তার ভাষ্য, পৃথিবীতে জীবনের জন্য কীটপতঙ্গকে মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে দেখা হয়।
“আমাদের সংরক্ষণ কর্মকাণ্ড এবং নীতি প্রয়োজন, যা কীটপতঙ্গের জন্য কাজে দেবে।”
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply