ইউক্রেনকে ন্যাটো নিয়ে ভাবা বন্ধ করতে হবে : ট্রাম্প

ডেস্ক রিপোর্ট :
ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আশার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, ইউক্রেনের মাটিতে মার্কিন কর্মীরা বিরল খনিজ আহরণে কাজ করলে এটি ইউক্রেনের জন্য ‘স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘কিয়েভকে ন্যাটো নিয়ে ভাবা বন্ধ করতে হবে’। তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের ইস্যুই যুদ্ধের প্রধান কারণগুলোর একটি। খবর বিবিসির।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি খুব বেশি দূরে নয়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি করব, যাতে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়।’

তবে জেলেনস্কি বলেছেন, সুরক্ষা গ্যারান্টি ছাড়া ‘আমাদের কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না, কিছুই কার্যকর হবে না’। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি ন্যাটো বা তার মতো কিছু খুঁজে পেতে চাই।’

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের বিরোধিতা করে আসছে, কারণ এটি রুশ সীমান্তের কাছাকাছি ন্যাটো বাহিনীকে এনে দেবে বলে মস্কোর আশঙ্কা।

২০০৮ সালে ন্যাটো ঘোষণা করেছিল, ইউক্রেন ভবিষ্যতে জোটের সদস্য হতে পারে।

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তি সই করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

জেলেনস্কি এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তিটিকে ‘প্রাথমিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তিনি মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টিসহ আরও বিস্তৃত চুক্তি চান, যা রাশিয়ার নতুন আক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

তবে ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনকে ‘অত্যন্ত সীমিত’ নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং এই দায়িত্ব মূলত ইউরোপের কাঁধে পড়া উচিত।

ট্রাম্প ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে রাশিয়া এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে।

জেলেনস্কি বলেছেন, বুধবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেওয়া খনিজ সম্পদ চুক্তির সফলতা নির্ভর করবে ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকের ওপর।

এই চুক্তির মূল বিষয়বস্তু এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী দেনিস শমিহাল বলেছেন, এটি ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘বিনিয়োগ তহবিল’ গঠনের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করছে।

জেলেনস্কি প্রথম এই চুক্তির ধারণা দিয়েছিলেন গত বছর। তবে চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।

প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের কাছ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ দাবি করেছিল, যা জেলেনস্কি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দাবি বাদ দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘খুব বড় এক চুক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘টাকা ফেরত পাওয়ার’ সুযোগ দেবে, যা ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, জেলেনস্কি এটিকে একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন, যার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আরও চুক্তি হতে পারে।

ট্রাম্প যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি চান এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের চেষ্টা করছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর দুই দেশের প্রতিনিধিদের সৌদি আরবে আলোচনায় পাঠিয়েছেন, যেখানে ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এতে ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পুতিনকে ‘বহু বছরের বিচ্ছিন্নতা’ থেকে বের হতে সহায়তা করছে।

ইউক্রেন খনিজ সম্পদের দিক থেকে সমৃদ্ধ দেশ। কিয়েভের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রায় ৫ শতাংশ ইউক্রেনে রয়েছে। তবে এই সম্পদ আহরণ করা সহজ হবে না।

রাশিয়া ইতোমধ্যে কিছু খনিজ সম্পদের অঞ্চল দখল করেছে। ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিডেনকো জানান, বর্তমানে দখলকৃত অঞ্চলে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ রয়ে গেছে।

এ ছাড়া ইউক্রেনের বিস্ফোরিত মাইন অপসারণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্বাঞ্চলে মাইন বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেশি এবং দেশটির মোট ভূমির এক-চতুর্থাংশ এ সমস্যায় আক্রান্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুতিনও যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে বিরল খনিজ সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন।

এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারও এই সপ্তাহে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন এবং যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবেন। বুধবার সন্ধ্যায় তার ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *