1. [email protected] : @nexttech :
  2. [email protected] : SM Solaiman : SM Solaiman
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ অপরাহ্ন

মেট্রোরেল বদলে দিয়েছে ঢাকাবাসীর জীবনচিত্র

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪
  • ৩৯ Time View

ডেস্ক রিপোর্ট :
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ায় বদলে গেছে ঢাকাবাসীর জীবনচিত্র। সকাল ৯টায় অফিসে পৌঁছানোর জন্য কিংবা সকাল ৮টার ক্লাসে হাজিরা দেওয়ার জন্য এখন আর সকাল ছয়টায় দৌড়াতে হয় না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন স্বস্তিতে ভ্রমণ করেন মেট্রোতে। সবার মধ্যে তাড়া আছে, কিন্তু উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা বিরক্তি নেই।

‘মেট্রোরেল একটা চমৎকার ব্যাপার। ভাবতেই ভালো লাগে। মানুষগুলো সকাল-সন্ধ্যা কাজের জন্য ছুটছে। কিন্তু তাদের কোনো ক্লান্তি নেই। বিরক্তি নেই। চেহারায় উৎকণ্ঠা নেই। কারণ, তারা জানে, তারা যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে’, বলেন পুরানা পল্টন লাইনের বাসিন্দা ইলোরা লিলিথ। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার। তার একমাত্র বাচ্চা তূর্ণ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুল ‘প্রয়াস’ এ ভর্তি হয়েছে সে। এতদূর কীভাবে যাওয়া-আসা করবেন, তাই নিয়ে দুর্ভাবনায় ছিলেন। কিন্তু মেট্রোরেল তার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। প্রতিদিন বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে করে কারওয়ান বাজার নামেন। সেখান থেকে এসি বাসে বাচ্চার স্কুল। কোনো ঝামেলা ছাড়াই সময়মতো পৌঁছে যেতে পারেন স্কুলে।

সারা দিনের ক্লাস শেষে ভিড় মেট্রোতে মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অর্চিশার ক্লান্তি নেই। সে অনর্গল কথা বলছিল, ‘এখন অনেক মজা। মা রোজ সকালে স্কুলে দিয়ে যায়। আবার বিকেলে মা এসে নিয়ে যায়। আর আগের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি বাসায় যাই। তাই, বিকেলে মা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে দেয়।’ উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী অর্চিশা প্রতিদিন শেওড়াপাড়া থেকে বাসে এসে ক্লাস করত। পথে জ্যামের কারণে প্রায়ই বাসায় ফিরতে সন্ধ্যে হতো। এখন মেট্রোতেই আসা-যাওয়া করে। শাহবাগ থেকে ১৫ মিনিটেই বাসায় পৌঁছাতে পারে।

সংবাদকর্মী আখতার জামান ১৫ বছর ধরে মিরপুর থেকে পল্টন অফিস করেন। নিজে গাড়ি চালিয়েও প্রতিদিন তেল খরচ হতো ১০০০ টাকার। কখনো বা তার চেয়েও বেশি। আর এখন খরচ হয় ১০৮ টাকা। ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে সকাল ৭টায় রওনা দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাশতা খেয়ে অফিসে ঢুকতেন। অফিস সময় ৯টা থেকে ৩টা। কিন্তু কোনোদিনই সন্ধ্যার আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারতেন না। এখন তিনি নিয়মিত মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন।

আখতার জামান বলেন, ‘এটা যে কী দারুণ ব্যাপার, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি প্রতিদিন ভোরে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরি। গোসল ও নাশতা করে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে যাই। বাচ্চাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে পায়ে হেঁটে মেট্রো স্টেশনে আসি। প্রতিদিন বাসার বাইরে নাশতা খেতে হয় না। বাচ্চাদের সময় দিতে পারি। এতকিছু করেও আমি দুপুর ১২টার মধ্যে অফিসে পৌঁছে যাই। আবার ৫টায় বের হয়ে সন্ধ্যা ৬টার আগেই বাসায় পৌঁছাই।’

আবার যারা মেট্রোরেলে পুরো পথ যেতে পারেন না, তারাও সময় বাঁচাতে কাছাকাছি মেট্রোস্টেশন থেকে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যের কাছাকাছি কোনো স্টেশনে। তারপর সেখান থেকে রিকশা, টেম্পু, সিএনজি, এমনকি বাসেও যাতায়াত করছেন।

যারা ভিড় এড়াতে ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করতেন তারাও এখন মেট্রোতে যাতায়াত করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। কারণ, ঘড়ির কাটায় চলা মেট্রোরেলে যাতায়াতে ট্রাফিক জ্যামের ঝুঁকি নেই। তেমনি নেই মাথা নিচু করে দেরি করে অফিসে পৌঁছানো, কিংবা প্রতিদিন অফিসের বকুনি খাওয়া। স্কুলে দেরি করার জন্য জবাবদিহি করার ঝামলাও নেই।

ছয় বছর ধরে স্কুলের বাস অথবা প্রাইভেট গাড়িতে পুরানা পল্টন থেকে মিরপুর যাতায়াত করে স্কলাসটিকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মূর্চ্ছনা। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। প্রতিদিন সকাল ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় বাসায় ফিরত। কাজেই রুটিন অনুযায়ী কিছুই করা হতো না। কিন্তু সকাল-সন্ধ্যা মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর মূর্চ্ছনা এখন মেট্রোতে যাতায়াত করে। সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হয়ে আটটার মধ্যে পৌঁছে যায় স্কুলে। আর বাসায় ফিরতে পারে বিকেল চারটার মধ্যেই।

মূর্চ্ছনা জানায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকায় শারিরীকভাবেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। ট্রেনে যাতায়াত করলে যে শারীরিক পরিশ্রম হয়, সেটা তাকে অনেক স্বস্তি দিয়েছে। এখন বিকেলটা অনেক বড়। তাই নিজের জন্যও একটু সময় পাওয়া যায়।

যারা প্রতিদিন অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে বের হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে বসে থাকতে বাধ্য হতেন, তারা সবাই স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন। তারা একটু ঘুর পথে হলেও মেট্রোতেই যাতায়াত করছেন। বিশেষ করে উত্তরার বাসিন্দারা এই সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। আবার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা জ্যাম এড়াতে আগারগাঁও থেকে মেট্রোতে করে মতিঝিল যাচ্ছেন। আবার যারা পথের ট্রাফিক জ্যামের কথা ভেবে অফিস শেষে একটু দেরি করেই বাসায় ফিরতেন, তারাও এখন মেট্রোরেলের সুবিধা নিতে আগে আগে বাড়ি ফিরছেন। এতে করে পরিবারের সঙ্গে তারা বেশি সময় কাটাতে পারছেন।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন। প্রথম ধাপে সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে গত ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন তিনি। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুরোদমে চালু হয় মেট্রোরেল। এদিন চলাচলের সময়সূচি অপরিবর্তিত রেখে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সবক’টি স্টেশনে মেট্রো ট্রেন থামতে শুরু করে। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশন রয়েছে। তৃতীয় ধাপে গত ২০ জানুয়ারি থেকে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন এ সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট এবং বিকেল ৪টা ১ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ১০ মিনিট পরপর মেট্রোরেল স্টেশনে থামবে। অফ পিক আওয়ারে (বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত) ১২ মিনিট পরপর মেট্রো ট্রেন স্টেশনে থামবে। উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেনটি সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ছাড়বে এবং মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। তবে, সকাল সাড়ে ৭টার আগে ও রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের পর কেবল এমআরটি বা র‌্যাপিড পাস ব্যবহারকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। কারণ, রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের পর সব টিকিট বিক্রয় অফিস এবং টিকিট বিক্রয় মেশিন বন্ধ হয়ে যায়।

মেট্রোরেলের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় এই মেগাপ্রকল্পটির অনুমোদন দেন। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল লাইন (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের ২৬ জুন শুরু হয়।

এটিভি বাংলা / হৃদয়

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2022
কারিগরি সহায়তা: Next Tech