নিউইয়র্ক সিটিকে সাম্প্রতিককালে হত্যাসহ সব ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে এবং বিশেষ করে সাবওয়েতে যাত্রীদের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, যার প্রমাণ গত সপ্তাহের উইকএন্ড সাবওয়েতে ৮টি হামলার ঘটনা। সিটি মেয়র এবং স্টেট মেয়র উভয়ে সাবওয়েতে অপরাধ বৃদ্ধি কারণ হিসেবে স্থির করেছে হোমলেস মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিকে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সাবওয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সাবওয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ জাগ্রত হয়নি, যার ফলে সাবওয়েতে বর্তমানে যাত্রী সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সাবওয়ে স্টেশন ও ট্রেনগুলোকে হোমলেসমুক্ত করার অভিযান আরম্ভ করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
গত সপ্তাহের উইকএন্ডসে সংঘটিত হামলার ঘটনাগুলো শুরু হয় গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে। ম্যানহাটানের মর্নিংসাইড হাইটস এ ১ ট্রেনের সাউথবাউন্ড ট্রেনের ৩১ বছর বয়সী এক যাত্রী এক ব্যক্তিকে ধূমপান করতে নিষেধ করায় তাঁর বামহাতে ছুরিকাঘাত দিয়ে শুরু এবং গত সোমবার ভোরে ব্রঙ্কসে সাউথবাউন্ড ৪ ট্রেনে ৩০ বছর বয়সী এক তরুণীকে ধাতব পাইপ দিয়ে মুখের ওপর আঘাত করার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহের ঘটনার সমাপ্তি। এ ধরনের হামলার ঘটনা প্রতিটি বরোতে ঘটে চলেছে, বিভিন্ন ট্রেনে, বিভিন্ন সাবওয়ে স্টেশনে। গত উইকএন্ড এর কোনো ঘটনার ভয়াবহতা তেমন মারাত্মক না হলেও এসব ঘটনা বিশেষভাবে সাবওয়ে ব্যবহারকারীদের এবং সাধারণভাবে নিউইয়র্কারদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে।
সাবওয়েতে হামলার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রকৃতি থেকে বোঝা যায় যে এ ধরনের হামলা সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা নয়, বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু ছোট ছোট ঘটনার বিস্তৃতিতে সিটি প্রশাসন এবং এনওয়াইপিডি দ্বিধাগ্রস্থ যে তারা কীভাবে এসব হামলার ঘটনা মোকাবেলা করবে। দেশের সর্ববৃহৎ পরিবহন ব্যবস্থায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সিটির সার্বিক পরিবহন ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং সামগ্রিকভাবে ভোগান্তির শিকার হবে সিটিবাসী। কারণ নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ এই সাবওয়ে ব্যবস্থা, যা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক ব্যবহার করে। সাবওয়ের যাত্রীসংখ্যা হ্রাস পেলে নিউইয়র্কের সাবওয়ের বিদ্যমান লোকসান আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ট্রেন সংখ্যা হ্রাস করলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।
নিউইয়র্ক পুলিশের রিপোর্টে দেখা যায় যে ২০১৯ সালে সাবওয়েতে সংঘটিত অপরাধমূলক ঘটনা ও যাত্রীদের ওপর হামলার চেয়ে ২০২১ সালে হামলার ঘটনা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাস জনিত মহামারীর কারণে সাবওয়ের যাত্রীসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়া সত্বেও যাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে ২০১৯ সালের চেয়ে ২৫ শতাংশ, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। পুলিশের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায় যে গত বছরের জানুয়ারি মাস এবং ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে যে সংখ্যক অপরাধী ও সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, চলতি বছরের একই সময়ে এ ধরনের গ্রেফতার বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৪ শতাংশ। পুলিশ বলছে, সিটিতে বড় ধরনের বেশ কয়েকটি অপরাধের ঘটনা, যার মধ্যে অতি সাম্প্রতিক সময়ে টাইমস স্কোয়ার সাবওয়ে স্টেশনে এক নারীকে প্ল্যাটফর্ম থেকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে হত্যার ঘটনার পর সাবওয়ে অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েছে।
মেট্টোপলিটান ট্রান্সপোর্টেশন এজেন্সির মুখপাত্র অ্যারন ডনোভান বলেছেন, গত উইকএন্ডে সংঘটিত ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। গত শুক্রবার সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল ‘সাবওয়ে সেফটি প্ল্যান’ ঘোষণা করেছেন, যার সাবওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ১,০০০ হোমলেসকে স্টেশনগুলো থেকে অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও পুনর্বাসন করা এবং সাবওয়ের হামলার ঘটনায় জড়িত এবং অন্যান্য ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারকৃতদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করার কর্মসূচি অন্তর্ভূক্ত। ঘোষণা অনুযায়ী গত সোমবার থেকেই স্টেশন থেকে হোমলেসদের অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সিটি প্রশাসন এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে এবং ইতোমধ্যে সাবওয়ে স্টেশনগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যারা নিশ্চিত করবেন যে হোমলেসরা যাতে স্টেশনে, প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে অথবা ট্রেনের ভেতরে বেঞ্চে শুয়ে বসে না থাকে, এমনকি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্টেশনে অবস্থান না করে।
এছাড়া বেশ কয়েক ডজন মেন্টাল হেলথ প্রফেশনালকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত বলে তাদের আচার আচরণে মনে হয়, তাদেরকে তাদের ইচ্ছার বাইরে মনোরোগ চিকিৎসার হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। ২০ ফেব্রুয়ারি এক সভায় সিটি মেয়র এরিক এডামস বলেন, এখন থেকে সাবওয়ের নিরাপত্তার জন্য হুমকি-এমন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদেরকে সাবওয়েতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। হোমলেসসহ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে যারা সাবওয়েতে অরাজকতার জন্য দায়ী, তাদের ওপর সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এখন থেকে সাবওয়েতে ঘুমানো, ড্রাগ সেবন ও বারবিকিউ করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আইন মেনে টিকিট কেটে নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে হবে যাত্রীদের। শুধু অপরাধীদের গ্রেপ্তার করলেই হবে না, পুরো প্রক্রিয়াটাকেই পরিশুদ্ধ করতে হবে। এছাড়া নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে অপরাধীদেরও চিহ্নিত করতে হবে।
Leave a Reply