আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মক্কার মসজিদুল হারামে লাখ লাখ হজযাত্রী গতকাল রোববার (২৫ জুন) তাওয়াফ আল-কুদুম বা আগমনী তাওয়াফ সম্পন্ন করেছেন। এটি হজযাত্রীদের প্রথম তাওয়াফ। পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণের মধ্য দিয়ে হজযাত্রীরা নিজেরা উপস্থিত হতে পারার জন্য মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
রোববার রাতেই হজযাত্রীরা মিনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। মিনা হচ্ছে মক্কা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত একটি তাঁবুর শহর। এরপর তারা আরাফাতের ময়দানে যাবেন, যেখানে মহানবি হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিদায়ী খুতবা দিয়েছিলেন।
সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী আজ (সোমবার) ৮ জিলহজ, যা তারবিয়ার দিন হিসেবে পরিচিত। হজযাত্রীরা সারা দিন ও রাত মিনায় অবস্থান করবেন। পরের দিন আরাফাত পর্বতে মহাপুণ্যময় ইবাদতের জন্য নিজেদের মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে এই সময়টাকে কাজে লাগাবেন তারা।
আগামীকাল ৯ জিলহজ (মঙ্গলবার) হাজিরা আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হবেন। এই পবিত্র স্থানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে দুআ (প্রার্থনা) করবেন তারা। এছাড়া আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে হজযাত্রীরা নামিরাহ মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করবেন তারা। বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী সম্মিলিতভাবে আল্লাহর উপাসনায় নিজেদের নিমগ্ন রাখবেন।
৯ জিলহজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায়, হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করবেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটাবেন এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন। মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।
জামারাত আল-আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করার পর হজযাত্রীরা পশু কোরবানি করবেন। এরপর তাওয়াফ আল-ইফাদাহ বা ফরজ তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে যাবেন। এই তাওয়াফ অবশ্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো সময় করতে পারবেন তারা। এ সময় তারা কাবা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করবেন এবং মাথা মুণ্ডন করবেন। একবার এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের আর ইহরামের নিয়মের মধ্যে আবদ্দ থাকতে হবে না। তারা সব হালাল (অনুমতিযোগ্য) কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন।
হজের অবশিষ্ট আচারগুলো সম্পন্ন করতে হজযাত্রীদের অবশ্যই আবার মিনায় ফিরে যেতে হবে। তাশরীকের দিনগুলোতে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হজযাত্রীদের মিনায় আরও দুটি কাজ করতে হবে। ১১ জিলহজ বিকেলে হজযাত্রীরা ২১টি ছোট পাথর সংগ্রহ করে তিন জামারাতে নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শুরু হয় জামারাত আল-উলা, তারপর জামারাত আল-উস্তা এবং পরে জামারাত আল-আকাবা দিয়ে শেষ হয়।
মক্কা থেকে যাত্রা করার আগে হজযাত্রীদের তাওয়াফ আল-বিদা করতে হবে, যা বিদায়ী তাওয়াফ নামেও পরিচিত। এটি হজ সম্পন্ন করায় অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং সব হজযাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০১৯ সালের পর এবারের হজে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করছে। ২০১৯ সালে আনুমানিক ২৫ লাখ মানুষ হজে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার ব্যক্তিকে হজে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫৯ হাজার। সৌদি কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে মোট আট লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৩ জন হজ করতে পেরেছিলেন। সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর ২০ লাখ হজযাত্রীকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply