ইউরোপীয় ইউনিয়ন এজেন্সি ফর অ্যাসাইলামের (ইইউএএ) আশ্রয় আবেদনের প্রবণতাসংক্রান্ত বার্ষিক হালনাগাদ প্রতিবেদনের বরাতে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এসব তথ্য জানিয়েছে।
নিজ দেশে বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনৈতিক কারণে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে বা কারও জীবন হুমকির মুখে থাকলে তিনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইউরোপের দেশগুলোতে সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কতসংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে, তা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে ইইউএএ।
সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও লিশটেনস্টাইনে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি। ২০১৪ সালে ইইউএএ-এর পরিসংখ্যান প্রকাশ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি বাংলাদেশিদের আবেদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন আফগান ও সিরীয়রা। এবং সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আবেদনকারীর তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলো। তালিকায় প্রথম পাঁচে রয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান ও তুরস্ক। বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ।
গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮০০টি আবেদন জমা পড়েছে। এই সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের আবেদনের হার তিন–চতুর্থাংশ বেড়েছে। তাদের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বাংলাদেশিও আছে।
ইইউএএ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭ হাজার ৩০০ আবেদনকারী তাদের ‘অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে দাবি করেছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাদের মধ্যে অর্ধেক বা প্রায় ১৩ হাজার আবেদনকারীই আফগান নাগরিক। ‘অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক’ দাবি করা আবেদনকারীদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সিরীয়রা। তাদের আবেদনের সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজার। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশিরা। তাদের এমন প্রায় ১ হাজার ৪০০ আবেদন জমা পড়েছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০২০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা ১৭৪ শতাংশ বেশি। তবে ২০২১ সালে বাংলাদেশি মোট আবেদনকারীর হিসেবে ‘অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্কের’ সংখ্যা মাত্র ৭ শতাংশ।
২০২১ সালে বাংলাদেশিদের প্রায় ১৬ হাজার ৩০০টি আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে এই সংখ্যা দুই–তৃতীয়াংশ বেড়ে ২০১৮ সালের রেকর্ড পরিসংখ্যানের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে এরপরও ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ১২ হাজার ১০০টি আবেদন ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। এগুলোর পাঁচ ভাগের তিন ভাগ আবেদন করা হয়েছিল ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে।
ইইউ প্লাস দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের আবেদনের প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তেমনি আবেদন প্রত্যাখ্যানের হারও বেড়েছে। ২০২১ সালে ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশিদের আবেদন বাতিল হয়েছে। মাত্র চার শতাংশ আবেদনকারী ‘সাবসিডিয়ারি প্রটেকশনের’ অধীন ইউরোপে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন।
এটিভি বাংলা/সুমন
Leave a Reply