পাকিস্তানে ভয়াবহ ঝড়-বৃষ্টিতে ১৯ জনের মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট :
পাকিস্তানের পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) ও ইসলামাবাদে ভয়াবহ ঝড়, ভারী বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৯০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

গতকাল শনিবার (২৪ মে) বাতাসের গতি ও বজ্রপাতের কারণে সড়ক ও আকাশপথে চলাচল ব্যাহত হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়। খবর ডনের।

ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবে তাণ্ডব

ইসলামাবাদে প্রবল বাতাস, শিলাবৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টিতে নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে যায়। বহু স্থানে গাছ পড়ে যায়। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) ও রেসকিউ ১১২২ এর তথ্য অনুযায়ী, লাহোর ও ঝেলমে তিনজন করে, সিয়ালকোট ও মুজাফফরগড়ে দুইজন করে এবং শেখুপোরা, নানকানা সাহিব, আট্টক, মুলতান, রাজানপুর, হাফিজাবাদ, মিয়ানওয়ালি, ঝাং ও লইয়ায় একজন করে নিহত হয়েছেন।

লাহোরে এক নির্মাণাধীন বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে ৫২ বছর বয়সী শ্রমিক ইমতিয়াজ ইয়াকুব নিহত হন। পির ওয়াধাইয়ের ফৌজি কলোনিতে আরেকটি দেয়াল ধসে পড়লে ৬০ বছর বয়সী নাসিবুল্লাহ নিহত হন।

আট্টকে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং এক নারীসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। নিহত শিশুটির নাম মোহাম্মদ হাসান শাহবাজ, সে গ্রেড-২ এর ছাত্র ছিল।

কেপিতে শিলাবৃষ্টি ও ফসলের ক্ষতি

খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশাওয়ার, মারদান, সোয়াত, আবোটাবাদ, খাইবার ও সোয়াবি জেলায় প্রবল শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ১১৩টির বেশি বিদ্যুৎ লাইন ছিরে যায়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

সোয়াতে আকস্মিক বন্যায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অন্ধকারে পরীক্ষায় বসতে হয়। কৃষকদের অভিযোগ, মোহমান্দ জেলার আম্বার ও পণ্ডিয়ালি তহসিলের ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পেশাওয়ার ক্যান্টনমেন্টে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনে ঝড়ের প্রভাব পড়ে। পেশাওয়ার ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি জানিয়েছে, কাজ শুরু করার জন্য সামরিক কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন ছিল।

আকাশপথে দুর্যোগ, ফ্লাইট ফেরত

করাচি থেকে লাহোরগামী একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এফএল-৮৪২ ভয়াবহ টার্বুলেন্সের মধ্যে পড়ে। পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠায় পাইলট ল্যান্ডিং বাতিল করে করাচিতে ফিরে আসেন। যাত্রীরা আতঙ্কে পড়ে যান এবং ৫৭ জন যাত্রী ফের ফ্লাইটে উঠতে অস্বীকৃতি জানান।

খারাপ আবহাওয়ার কারণে আরও দুইটি ফ্লাইট লাহোর থেকে করাচিতে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। পরে আবহাওয়া স্থিতিশীল হলে ফ্লাইট চলাচল পুনরায় শুরু হয়।

রোববারেও দুর্যোগের আশঙ্কা

পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, রোববারও পাঞ্জাব ও কেপির বিভিন্ন অঞ্চলে – লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, মুলতান, ফয়সালাবাদ, পেশাওয়ার, মারদানে আরও বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

জরুরি সতর্কতা ও ত্রাণ তৎপরতা

পিডিএমএর মহাপরিচালক ইরফান আলী কাঠিয়া জেলা প্রশাসন ও রেসকিউ এজেন্সিগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলেছেন। বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন সংস্থাগুলো পানি নিষ্কাশনে কাজ করছে।

বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও প্রভাব

হাজারার বাফা এলাকায় অনুষ্ঠিত তাবলীগি ইজতেমায় দ্বিতীয় দিনে ঝড় ও বৃষ্টিতে কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটে। আয়োজকেরা জানান, রোববারের বিশেষ মোনাজাতে লাখো মানুষের সমাগম হতে পারে।

সার্বিকভাবে, এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টি পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *