ইসরায়েলে ভয়াবহ দাবানল

ডেস্ক রিপোর্ট :
স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের আবহের মধ্যেই ইসরায়েলের জেরুজালেমের কাছে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল জাতীয় সংকটে রূপ নিয়েছে। দাবানলের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, এটি দ্রুত শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জরুরি সতর্কতা জারি করেছেন। বৃহস্পতিবার (১ মে) এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুনের লেলিহান শিখা আর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী মহাসড়কের আকাশ ছেয়ে ফেলেছে। জীবন বাজি রেখে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

ইসরায়েলের জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) এই দাবানলকে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। আহতদের অধিকাংশই ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট ও শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়েছে। এমডিএ কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাস খুব সহজেই আগুনকে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে, এমনকি শহরের অভ্যন্তরেও ঠেলে দিতে পারে।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি জরুরি ভিত্তিতে আরও দমকল ইঞ্জিন আনার এবং আগুনের বিস্তার ঠেকাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এই দুর্যোগকে কেবল একটি স্থানীয় ঘটনা নয়, বরং একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিতব্য ইসরায়েলের স্বাধীনতা দিবসের পূর্বনির্ধারিত আনন্দ-অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী জানান, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে সব ফায়ার সার্ভিস কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মকভাবে মনোযোগ দিতে পারেন।

পুলিশ জানিয়েছে, জেরুজালেম ও তেলআভিভের প্রধান সংযোগকারী মহাসড়কটি ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং আগুনের হুমকির মুখে থাকা নিকটবর্তী এলাকাগুলো থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষার্থী ইয়োসেফ অ্যারন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক পুলিশ ও অগ্নিনির্বাপণ কর্মী এসেছেন, কিন্তু আগুনের তীব্রতা এত বেশি যে তাদের প্রচেষ্টা তেমন কাজে আসছে না। আগুন ইতোমধ্যেই পুরো এলাকা গ্রাস করে ফেলেছে।’

ইসরায়েলের দমকল প্রধান এয়াল ক্যাসপি আবহাওয়ার প্রতিকূলতাকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিমানগুলো কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার এখন মানুষের জীবন রক্ষা করা।’ তিনি এই দাবানলকে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, জেরুজালেম হিলস ও তেলআভিভের দিকে যাওয়া রাস্তাগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং জনসাধারণকে ওই এলাকায় অপ্রয়োজনে চলাচল না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিছু এলাকায় ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ পূর্ব জেরুজালেমের এক ব্যক্তিকে দক্ষিণাঞ্চলে একটি মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টাকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে। বেন গভীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা ‘আগুন সন্ত্রাসের’ সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে এবং পুলিশের নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা ও প্রবল বাতাসের কারণে পাঁচটি কমিউনিটির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

ইসরায়েল সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রিস, সাইপ্রাস, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি ও বুলগেরিয়ার কাছে সাহায্যের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসরায়েলের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় ‘সরঞ্জামগত সহায়তা’ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, ইতালি ও ক্রোয়েশিয়া থেকে তিনটি বিমান খুব শিগগিরই আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেবে।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *