ওষুধ ও প্রযুক্তিপণ্যে শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

ডেস্ক রিপোর্ট :
জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ওষুধ ও আধুনিক প্রযুক্তিপণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, আমদানি করা ওষুধ এবং সেমিকন্ডাক্টর ও চিপ তৈরির যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি এখন তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জেতে না।

এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে আমদানি পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপে দুই দেশের মধ্যে লড়াই চরমে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, আর চীন পাল্টা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে। এমন উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট কিছু ইতিবাচক আলোচনার কথা বলেন, যদিও বিস্তারিত কিছু জানাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনা চলছে, জাপানের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে বুধবার (১৬ এপ্রিল), আর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা হবে আগামী সপ্তাহে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কিছু প্রযুক্তিপণ্যে সাময়িক ছাড় দেওয়ার ঘোষণা আসায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। এতে ওয়াল স্ট্রিটসহ এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেসাই বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে চান, এবং পুরো প্রশাসন এই লক্ষ্যেই কাজ করছে।’ তিনি বলেন, এই শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন খাত ফিরিয়ে আনবে।

তবে রোববার ট্রাম্প বলেন, সেমিকন্ডাক্টরসহ প্রযুক্তিপণ্যে শুল্ক ছাড় কেবল সাময়িক। তিনি এই খাতে শুল্ক আরোপে এখনো আগ্রহী।

এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তারা তাদের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে আরও চার দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ঘিরে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা তাদের শিল্পখাতে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না’ এবং শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা বিবেচনা করছেন।

এদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভিয়েতনাম সফরে আবারও বলেছেন, বাণিজ্যে সুরক্ষা নীতি (প্রোটেকশনিজম) কোনো লাভজনক পথ নয় এবং বাণিজ্যযুদ্ধ কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনে না।

আলোচনা ও সম্ভাব্য সমঝোতা

হোয়াইট হাউস বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে আশাবাদী, যদিও তারা মনে করছে, আলোচনায় আগে এগিয়ে আসতে হবে বেইজিংকেই।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য প্রধান মারোস সেফকোভিচ বলেছেন, ইউরোপ ‘বৈষম্যহীন ও ন্যায্য একটি চুক্তি’র বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

মারোস সেফকোভিচ আরও বলেন, শিল্পপণ্যে শূন্য-শুল্ক ভিত্তিতে আলোচনা হতে পারে, তবে সেটি সম্ভব করতে হলে দুই পক্ষকেই যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

হোয়াইট হাউসের দাবি, ৯০ দিনের মধ্যে একাধিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করেছে।

এ সপ্তাহে জাপানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারবিষয়ক মন্ত্রী রিওসেই আকাজাওয়া ওয়াশিংটনে আলোচনা করবেন, কারণ তাদের গাড়ি শিল্প ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


Posted

in

,

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *