বিশ্ব অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের ‘অনিশ্চিত খেলা’

ডেস্ক রিপোর্ট :
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “পাল্টা শুল্ক” কার্যকর হওয়ার আগের দিন পুরো বিশ্ব অর্থনীতি যেন দাঁড়িয়ে আছে এক অনিশ্চিত সংঘাতের দোরগোড়ায়।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ যাদের “সবচেয়ে বড় অপরাধী” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ট্রাম্প, তারা হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ যেমন নমনীয়তা দেখাচ্ছে, তেমনই চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের কৌশলে এগোচ্ছে।

স্থানীয় সময় রোববার (৬ এপ্রিল) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কেট কতটা পড়লে তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টাবেন—এই প্রশ্নে ট্রাম্প রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “এটা একটা বোকা প্রশ্ন।” খবর বিবিসির।

অনেক বিনিয়োগকারী ও রাজনীতিক আশা করছেন, ট্রাম্পের এই অবস্থান হয়তো কেবলমাত্র একটি দরকষাকষির কৌশল। তবে অন্যরা মনে করছেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য—যার উদ্দেশ্য আমেরিকান অর্থনীতিকে বৈশ্বিক কাঠামোয় পুনর্গঠন করা এবং “ভালো চুক্তি না দিলে মিত্রদেরও প্রতিপক্ষ ভাবার” নতুন বাস্তবতা তৈরি করা।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের ঘোষণার পর প্রথম বিশ্ব নেতা হিসেবে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানান, ইসরায়েল ১৭ শতাংশ শুল্ক এড়াতে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে। নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা মনে করি এটি সঠিক পদক্ষেপ।”

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ট্রাম্পকে ফোন করে আলোচনার আগ্রহ জানান। এরপর মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, “জাপানের সঙ্গে একটি নতুন ‘গোল্ডেন এজ অব গ্লোবাল ট্রেড’ বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি।”

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইয়েনও শুল্ক হ্রাসে আলোচনার প্রস্তাব দেন। ট্রাম্প এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক বললেও জানান, “এটি যথেষ্ট নয়।”

এদিকে চীন সোমবার জানায়, ট্রাম্পের ৩৪ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির জবাবে তারাও ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দেবে। ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দেন—চীন যদি পিছু না হটে, তাহলে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

চীনের দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, “চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি বা হুমকি দেওয়া কখনও কার্যকর হয়নি। আমরা আমাদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করব।”

ট্রাম্পের নীতির ফলে গতকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) মার্কিন শেয়ারবাজারে ব্যাপক ওঠানামা দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিভ্রান্তিকর পোস্টে বলা হয়, ট্রাম্প শুল্ক কার্যকরের তারিখ ৯০ দিন পিছিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে মাত্র ১০ মিনিটে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ প্রায় ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের উত্থান ঘটায়। তবে হোয়াইট হাউস দ্রুত তা অস্বীকার করলে বাজার আবার ধসে পড়ে।

সোমবার বিকেলে ট্রাম্প বলেন, “আমি কোনো বিলম্ব ভাবছি না। এটা আমাদের একবারের সুযোগ।” ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ফিনানশিয়াল টাইমসে লিখেছেন, “এটা কোনো দরকষাকষি নয়। বিশ্ব নেতারা যারা এখন শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিচ্ছেন, তাদের জেনে রাখা উচিত—এটাই কেবল শুরু।”

অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে একটি গোপন পরিকল্পনা রয়েছে—বিশ্ব মুদ্রাবাজারে ডলারের মান কমিয়ে আমেরিকান পণ্যের প্রতিযোগিতা বাড়ানো এবং চীনের ডলার রিজার্ভের মূল্য কমানো। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা স্টিফেন মিরান এই পরিকল্পনার পক্ষে থাকলেও প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি।

বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও কৌশল ঘিরে ধোঁয়াশা থাকলেও ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন—তিনি পিছু হটবেন না। আগামীকাল বুধবার (৯ এপ্রিল) শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা যতই ঘনিয়ে আসছে, বিশ্ব অর্থনীতি যেন এক অনিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে—এবং ট্রাম্প যেন সেই খেলায় বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন: “কে আগে চোখে চোখ রেখে পিছু হটবে?”

এটিভি বাংলা / হৃদয়

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *