এবার গাজার ‘কিছু এলাকা’ দখলের হুমকি ইসরায়েলের

ডেস্ক রিপোর্ট :
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনাবাহিনীকে ‘গাজার আরও এলাকা দখল’ করতে বলেছেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, হামাস যদি বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তবে গাজার কিছু অংশ স্থায়ীভাবে দখল করে নেওয়া হবে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘জীবিত ও মৃত উভয়’ জিম্মিদের ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী গাজায় ‘ক্রমবর্ধমান তীব্রতায়’ স্থল অভিযান চালিয়ে যাবে।

গাজায় এখনও বন্দি থাকা ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা অগ্রগতি না হওয়ায় তাদের ভাগ্য অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

জানুয়ারি মাস থেকে চলমান ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ এই সপ্তাহে শেষ হয়েছে। এরপরই ইসরায়েল গাজায় তাদের স্থল অভিযান এবং বোমাবর্ষণ পুনরায় শুরু করে, যার ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কর্মকর্তা স্যাম রোজ ‘গাজাজুড়ে চরম ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ঘটছে’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি উপত্যকাটির পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর, অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ করেছে। হামাস বলেছে, তারা ‘সম্পূর্ণ দায়িত্ব এবং গুরুত্বসহ মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে’।

তবে শুক্রবার এক বিবৃতিতে কাটজ বলেন, ‘হামাস যত বেশি অস্বীকৃতি জানানো অব্যাহত রাখবে, তত বেশি ভূখণ্ড ইসরায়েলের কাছে হারাবে।’

কাটজ আরও বলেন, ইসরায়েল এখনও মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের আনা প্রস্তাবে সম্মত, যেখানে বলা হয়েছে, ‘জীবিত ও মৃত সব জিম্মিদের আগে মুক্তি দেওয়া হবে এবং এরমধ্যে দুই দফায় যুদ্ধবিরতি থাকবে।’

ইসরায়েলি বাহিনীর পরিবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কাটজ আরও বলেন, ‘আমরা আকাশ, সমুদ্র ও স্থল থেকে হামলা চালিয়ে লড়াই আরও তীব্র করব এবং জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া ও হামাস পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত স্থল অভিযান বাড়াতে থাকব।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেন, ইসরায়েল ‘গাজার বাসিন্দাদের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বেচ্ছায় স্থানান্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে’।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করুক এবং পুনর্নির্মাণ করুক। একইসঙ্গে সেখান থেকে ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হোক।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাস বলেছে, গাজা ‘বিক্রয়ের জন্য নয়’। অন্যদিকে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, অধিকৃত অঞ্চল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা আন্তর্জাতিক আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, যা ‘জাতিগত নির্মূলের শামিল’।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্ততাকারীরা মাসব্যাপী আলোচনার পর তিন ধাপে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব করেছিল। প্রথম ধাপের পরে কীভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাস ঐকমত্য হতে পারেনি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রথম দফার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে পরিকল্পনাটি স্থগিত হয়ে যায়। হামাস এই পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করে বলে, এটি ইসরায়েলের ‘চুক্তি এড়ানোর স্পষ্ট প্রচেষ্টা’।

গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়, দুই দিনে ৪৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার হামাস ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে তিনটি রকেট হামলা চালায়।

সহিংসতা পুনরায় শুরু হওয়ার জন্য হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন, হামাস ‘প্রতিটি জিম্মি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে’।

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস এখনও ৫৯ জন জিম্মিকে বন্দি করে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন এখনও জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত চলমান যুদ্ধ এবং পুনরায় যুদ্ধ শুরুর জন্য সরাসরি হামাসকে দায়ী করেছেন। রাষ্ট্রদূত ডোরোথি শিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘হামাস যদি প্রস্তাব গ্রহণ করত, তাহলে প্রতিটি মৃত্যু এড়ানো যেত।’

হামাস আলোচনা বন্ধের জন্য দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা ‘সম্পূর্ণ দায়িত্ব ও গুরুত্বসহ মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে’।

টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে হামাস লিখেছে, তারা উইটকফের প্রস্তাব এবং অন্যান্য বিশ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করছে, যার লক্ষ্য হলো একটি বন্দি বিনিময় চুক্তি করা, যাতে বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত হয়, যুদ্ধের অবসান ঘটে এবং (গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা) প্রত্যাহার হয়।

অন্যদিকে কাটজ তার বিবৃতিতে আরও বলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যেসব এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করছে, সেখান থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হবে।

হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মার্চের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় সব খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর এক অভূতপূর্ব আন্তঃসীমান্ত হামলার জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসকে ধ্বংস করাতে অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৪৯ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই উপত্যকায় বাড়িঘর ও অবকাঠামোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।

এটিভি বাংলা/ হৃদয়


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *