ডেস্ক রিপোর্ট :
ট্রাম্প প্রশাসন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলোকে ডিটেনশনে রাখার ব্যবস্থা পুণরায় চালু করেছে। চলতি মার্চ মাসের শুরুতে সাউথ টেক্সাসে দুটি ডিটেনশন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে আটককৃত আনডকুমেন্টেড পরিবারগুলোকে রাখার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শেষদিকে ২০১৯ সালে মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর স্থাপিত কিছু স্থাপনাও একই কাজে লাগানো হতে পারে। ইমিগ্রেশন অধিকার প্রবক্তারা গত কয়েক দশক ধরে পরিবারসহ আনডকুমেন্ডেট ইমিগ্রান্টদের ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখার যে কৌশলের সমালোচনা করে আসছে। তাদের মতে, পরিবারের বাবা-মার সঙ্গে তাদের শিশু সন্তানদের বন্দীশিবিরে আটকে রাখার পরিণতিতে তারা নানা মানসিক জটিলতার মধ্যে পড়তে পারে। ইমিগ্রেশন বিষয়ক আইনজীবীরা পারিবারিক আটককে বিতর্কিত বলে বর্ণনা করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন স্থির করেছে যে আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট, তারা পরিবারসহ হোক অথবা পরিবার ছাড়া একক ব্যক্তি হোক না কেন, প্রথমে তাদের আটক করা হবে এবং আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে শেষ করার পর তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ডিপোর্ট করা হবে। কোনো দেশ যদি তাদের নাগরিকদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয় বিবেচনা করবে। প্রশাসনের মুখপাত্ররা বলছেন যে, ইতোমধ্যে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে, তাদের যদি ডিপোর্ট না করা হয়, তাহলে ভভিষ্যতেও অবৈধ ইমিগ্রেশনের প্রবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। অতএব অবৈধদের ডিপোর্টেশনের লক্ষ্যে ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে যারা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের কথা ভাববে, তাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।
বাইডেন প্রশাসনের অবসান ঘটার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে শিশুসহ পরিবারের আটক রাখার বিধান আবারও চালু করা হয়েছে, কারণ ইমিগ্রেশন সংস্কারের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন তার প্রথম মেয়াদের চেয়ে বেশি সক্রিয়। ইতিমধ্যে টেক্সাসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় যেসব স্টেটে শিশুসহ অবৈধ ইমিগ্রান্ট পরিবারকে আটক করা হয়েছে, তাদের ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে রাখার কাজ চলছে। ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা পরিবারগুলোর আইনি বিষয়গুলো দেখভালের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। প্রশাসন ওইসব স্থাপনাতেই বিশেষ ইমিগ্রেশন বিচারকদের মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন করে সেখান থেকেই ডিপোর্ট করবে পরিবারগুলোকে। অধিকার প্রবক্তারা আপত্তি জানাচ্ছেন যে, ইমিগ্রান্টদে মানবেতর অবস্থায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একাধিক পরিবারকে চার থেকে আটটি বাঙ্ক বিছানা এবং অনেকের জন্য একটি বাথরুম শেয়ার করার মত ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে এবং ওবামা প্রশাসনের সময় শিশুসহ পারিবারিক ডিটেনশনের ক্ষেত্রে শিশুদের চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা চালু ছিল। হোমল্যান্ড সিকিউরিটিগর মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলফ্লিন বলেছেন, একই ধরনের সার্ভিস দেওয়া হবে পরিবারগুলোকে। জানা গেছে আটককৃত পরিবারগুলোর অধিকাংশই সেন্ট্রাল আমেরিকানরা, যারা সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত অতিক্রম করেছে। ইতোমধ্যে তাদের কেউ যদি এসাইলামের জন্য আবেদন না করে থাকে তাহলে তাদেরকে দ্রুততার সঙ্গে ডিপোর্ট করতে ট্রাম্প প্রশাসন বদ্ধপরিকর।
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দি অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬০০ জন
যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি শিবিরগুলোয় বর্তমানে আটক আছেন ৪৭ হাজার ৬০০ জন নথিবিহীন অভিবাসী। এদের বেশিরভাগই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণের পর গত প্রায় ২ মাসে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। আটক কিংবা গ্রেপ্তার অভিবাসীদের একটি বড় অংশকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বাকিদের বিভিন্ন বন্দি শিবিরে আটক রাখা হয়েছে। আইসিইর তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা গেছে, বন্দি এই ৪৭ হাজার ৬০০ অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে ৩২ হাজার ৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে।
গ্রিন কার্ড থাকলেও অনির্দিষ্টকাল যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার নেই কারও
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তিনি বলেছেন, গ্রিনকার্ড থাকলেই কারও অনির্দিষ্টকালের জন্য আমেরিকায় থাকার অধিকার নেই। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘গোল্ড কার্ড’ চালুর চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, একজন গ্রিনকার্ডধারী অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারে না। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে কঠোর শুল্কনীতির কথাও ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
শুধু তা-ই নয়, আমেরিকায় জন্মগত নাগরিকত্ব আইন বদল নিয়ে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন ট্রাম্প। সেই আবহেই আমেরিকার অভিবাসন নীতিতে বড় বদলের পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। ‘গোল্ড কার্ড’ কিনে নাগরিকত্ব পেতে গুনতে হবে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬০ কোটি টাকা। অনেকের মতে, নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ চালু হলে বর্তমান ‘ইবি-৫ প্রোগ্রাম’ এর ওপর প্রভাব পড়তে পারে। ‘ইবি-৫ প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে অভিবাসী বিনিয়োগকারীরা আমেরিকায় গ্রিন কার্ড পেয়ে থাকেন। নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ চালু হলে ‘ইবি-৫ প্রোগ্রাম’ আর থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply