ডেস্ক রিপোর্ট :
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে, সেই রাজনৈতিক বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি। অন্যদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন তাদের সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে জমা দিয়েছে সরকারের কাছে। সে সুপারিশগুলো এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে, এ সবের আগে নির্বাচন কমিশন হাঁটছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে। নিচ্ছে প্রস্তুতিও।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত সোমবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইসি। ইসি সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন দলের নিবন্ধন পেতে আবেদন করা যাবে। এখন পর্যন্ত ৫৪টি রাজনৈতিক নিবন্ধিত রয়েছে। ফলে, আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। ফলে, নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের কমিশন গঠন করে। গত ১৫ জানুয়ারি এ কমিশন সংস্কারের সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দেয় সরকারের কাছে। যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচনি কাজ গুছিয়ে নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বুধবার (১২ মার্চ) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, যারা নতুনভাবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিতে চায়, তারা যেন প্রস্তুতির যথাযথ সময় পায়। সেজন্য এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে আবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে, এমনটা ধরে নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের ভেঙে পড়া নির্বাচনব্যবস্থা যথাযথভাবে দাঁড় করানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন গঠন করে। আমাকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়। আমরা অসংখ্য মানুষের মতামত নিয়ে কিছু সুপারিশ করেছি। সুপারিশগুলো এখন সরকারের কাছে রয়েছে। এগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে স্বৈরতন্ত্রের কাঠামো ভাঙতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু, যদি এগুলো বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে দেশের মঙ্গল হবে না।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, আমি আশা করব, নির্বাচন কমিশন সরকারের সঙ্গে আলাপ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। আলাপ-আলোচনা ছাড়া ইসির গণবিজ্ঞপ্তি জারি করাটা কাম্য নয় বলে আমার মত। ইসি আরেকটু অপেক্ষা করতে পারত। সেটা ভালো হতো।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, বিপুল কর্মযজ্ঞ শেষে স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় এবং সময়ও লাগে অনেকদিন। সেজন্য নির্বাচন কমিশন সে পথে হাঁটছে না। ইসি সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছেই না। সেজন্য, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
ইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে, নতুন ভোটার নিবন্ধন ও মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া চলতি বছরের জুনের আগে ভীষণ কঠিন। এখন থেকে যদি স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চূড়ান্ত করতে হয়, তাও এসব নির্বাচন শেষ করতে প্রায় এক বছর লেগে যাবে। এখনই স্থানীয় নির্বাচনের পথে হাঁটা বা তফসিল ঘোষণার পরিবেশ তৈরি হয়নি। ফলে, স্থানীয় সব নির্বাচন সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচন করতে হলে অনেক সময় লেগে যাবে।
ইসির আরেকটি সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে নাকি জুনের মধ্যে হবে, তা রাজনৈতিক বিতর্ক। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াতে চায় না। ফলে, ইসি তাদের মতো করে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এসব প্রস্তুতির মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পুনরায় সীমানা নির্ধারণ করতে কাজ করছে ইসি। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপন কোথায় করা হবে, কারা এ প্রক্রিয়ায় থাকবেন; সে হিসেবও কষতে শুরু করেছে ইসি।
নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একাধিক কমিশনার জানিয়েছেন, তারা সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাসুদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এই মুহূর্তে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। স্থানীয় নির্বাচন সাধারণত পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। যদি আমরা এই মুহূর্তে স্থানীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করি, তাহলে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply