1. [email protected] : @nexttech :
  2. [email protected] : SM Solaiman : SM Solaiman
বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেটঃ

হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামে ছয় দেশে সম্পদের সন্ধান

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
  • ৩ Time View

ডেস্ক রিপোর্ট :
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব তদন্তের প্রথমেই রয়েছে গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তদন্ত তালিকার দুই নম্বরে রয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। অভিযুক্তদের অর্থ দ্রুত ফেরত আনার লক্ষ্যে একটি বিশেষ আইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ আইনটি জারি করা হবে।

সোমবার (১০ মার্চ) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাচার অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে টাস্কফোর্সের সভায় এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিশেষ আইন করার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরে পাচার অর্থ ফেরত আনা সংক্রান্ত সরকারের ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স। সভায় অর্থ, আইন উপদেষ্টা ছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে সোমবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।

শেখ হাসিনার পাচার সম্পদ : যৌথ তদন্ত দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে দুটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিএফআইইউ তদন্ত দল দেশে ৫ দশমিক ১৫ কোটি টাকা স্থিতিসহ ১১টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। এ ছাড়া যৌথ তদন্ত দল দেশের বাইরে শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেমান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পেয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১৩৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে যেখানে ৬৩৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকা রয়েছে। রাজউকের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার দলিলমূল্যের ৬০ কাঠার প্লট পূর্বাচলে, ৮ দশমিক ৮৫ কোটি টাকার দলিলমূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ ৮টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে শেখ হাসিনার নামে ৬টি মামলা করা হয়েছে, যেগুলোর চার্জশিট দাখিল হয়েছে। পরিবারের সাত সদস্যকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিএফআইইউ ১০টি মামলার গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়েছে যেখানে সব দেশি-বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাবে ৬১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং ১৮৮টি বিও হিসাবের বিপরীতে ১৫ দশমিক ৫০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, যৌথ তদন্ত দল ৪টি মামলা দায়ের করেছে, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। এসব মামলায় ৮৪ জনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের নামে বিভিন্ন দেশে সম্পদ ও অর্থ পাচারের তথ্য প্রদান, ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে- যেখানে ১ হাজার ৮১৭ দশমিক ৭৩ কোটি টাকার দেশি সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৮৭২ কোটি ২৪ লাখ টাকার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ১৯ দশমিক ৬৮ হাজার কোটি টাকার (বিও অ্যাকাউন্ট) শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২৪ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৩ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন পাউন্ড এবং ১১ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পাচার সম্পদ : ১১টি গ্রুপের মধ্যে ২ নম্বরে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। যৌথ তদন্ত দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার বিষয়ে জালিয়াতি, প্রতারণা, কর ফাঁকি ও অন্যান্য অভিযোগে এনবিআরের ১১টি মামলা তদন্ত হচ্ছে। আদালত কর্তৃক ২০ কোটি টাকা মূল্যের ৪টি সম্পদ সংযুক্ত করা হয়েছে। দুটি ফ্ল্যাট এবং ৩১ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৩৯ ডেসিমেল সম্পত্তি সংযুক্তির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের বিপরীতে আদালত ২৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছেন যেখানে স্থিতি ছিল ৫ দশমিক ২৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া তার বিও অ্যাকাউন্টে ১০২ দশমিক ৮৫ কোটি টাকার শেয়ার ছিল। দেশের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি এবং যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি সম্পত্তির সংযুক্তির আবেদন করা হযেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিষয়ে তথ্য দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, তিনি লন্ডনে প্লটের পর প্লট কিনে ফেলেছেন। এগুলো সব বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে চুরি করা টাকা। তার বিষয়ে বিভিন্ন দেশে যে সম্পদ পাওয়া গেছে, তা জব্দের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রেস সচিব জানান, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন শ্বেতপত্র কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল যেগুলো ব্যাংকিং সেক্টর থেকে পাচার হয়েছে। এটা ছিল এক ধরনের হাইওয়ে ডাকাতি।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল ফোকাস ছিল কীভাবে এ অর্থ ফেরত আনা যায়। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে প্রধান করে গত সেপ্টেম্বরে ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এ টাস্কফোর্স ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মিলে অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে যৌথ তদন্ত চালাচ্ছেন। বিশেষ আইন সম্পর্কে প্রেস সচিব জানান, পাচার অর্থ ফেরত আনতে যে বিদেশি আইনি কোম্পানির সঙ্গে সরকারের চুক্তি হবে, সেই চুক্তি করতেই বিশেষ আইনটি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশি সহায়তাকারীরাও এ ধরনের একটি আইন চাইছেন।

পাচার অর্থ ফেরত আনতে এ পর্যন্ত ৩০০-এর বেশি বিদেশি ল ফার্ম যোগাযোগ করেছে জানিয়ে প্রেস সচিব আরও বলেন, এর মধ্যে ৩০টির মতো ল ফার্মের সঙ্গে সরকার চুক্তি করবে। সভায় ড. ইউনূস পাচার অর্থ ফেরত আনতে সর্বশক্তি নিয়োগের তাগাদা দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে এ বিষয়ে মিটিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। পাচার অর্থ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এ অর্থ কোথায় গেল, কীভাবে গেল, কার কাছে গেল-এ বিষয়ে বিশদ তথ্যও চেয়েছেন তিনি। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান পাচার অর্থের বিষয়ে একটি অবিশ্বাস্য তথ্য দিয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, দেশ থেকে ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়তে যায়। একটা কেসে দেখা গেছে, একটি সন্তানের এক সেমিস্টারের জন্য টিউশন ফি বাবদ ৪০০ কোটি টাকার ওপরে দেশ থেকে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা জানতাম ব্যাংকিং সেক্টর, হুন্ডি, আন্ডার ইনভয়েস এবং ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকাটা পাচার হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটা ছেলে পড়তে যাচ্ছে-তাকে টপ ইউনিভার্সিটিতে পড়ালে বছরে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার মতো লাগতে পারে। এই কেসে ৪ থেকে ৫০০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে, যা অবিশ্বাস্য। প্রেস সচিব জানান, পাচার অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ১৫ মার্চ লন্ডনে যাবেন। সেখানে গিয়ে যেসব ল ফার্ম সহায়তা করতে আগ্রহী এবং যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এটিভি বাংলা /  হৃদয়

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2022-2025
কারিগরি সহায়তা: Next Tech