ডেস্ক রিপোর্ট :
আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করছি যে, তিনি আমাদের সম্মানিত মহিমান্বিত মাস এবং কল্যাণকর, বরকতময় ও সুবাসিত মৌসুম দান করেছেন।
রমজান মাস বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসেই নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন, যে কোরআন মানবজাতির জন্য পথের দিশা। মানবজাতি কীভাবে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে সেজন্য কোরআনুল কারিম হচ্ছে সত্য-মিথ্যা, হারাম-হালাল, হক-বাতেল, সুন্নত, বিদাত, কুফর, ইমানের পার্থক্য নির্ধারণকারী। (বাকারা-১৮৬)।
দ্বিতীয়ত- এ মাসে সিয়াম রাখা প্রত্যেক মুসলমান, বিবেকবান, প্রাপ্তবয়স্ক, সিয়াম পালনে সক্ষম (শরিয়তসম্মত ওজর ব্যতীত) প্রত্যেক নারী-পুরুষের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যাতে তাকওয়া অর্জন করা যায়। (বাকারা-১৮৪)।
এ মাসটি রহমত হিসেবে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের দান করেছেন, কারণ আমরা এ মাসে ফজর হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য-পানীয় সব প্রকার লোভ-লালসা, কাম-স্পৃহা ত্যাগের মাধ্যমে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে পরবর্তী এগারো মাস এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আত্মশুদ্ধি অর্জনের প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হতে পারি। তাহলেই আমৃত্যু ইমানি দৃঢ়তা মজবুত হবে।
রসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের সিয়াম জাহান্নামের আগুনের জন্য ঢালস্বরূপ। সুতরাং রোজাদার কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, বর্বর আচরণ করবে না, তার সঙ্গে কেউ ঝগড়া-বিবাদ করতে এলে সে বলবে আমি রোজাদার। রসুল (সা.) আরও বলেন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে কস্তুরির সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম, কেননা (রোজাদার আল্লাহর জন্য খাদ্য, পানীয়, কাম-স্পৃহা বর্জন করে) সিয়াম আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিধায় আল্লাহ নিজ হাতে বিশেষভাবে রোজাদারদের পুরস্কার দেবেন। (বুখারি-১৭৬১)।
হে সাথী মুসলিম ভাই ও বোনেরা। এ মাসটি আমাদের জন্য অতীব রহমত ও বরকতের মাস। আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, রমজান মাস শুরু হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অধিকন্তু বিতাড়িত শয়তান যেন আমাদের বিপৎগামী করতে না পারে সেজন্য তাদের শিকলবন্দি করে রাখা হয়। (বুখারি-১৭৬৬)।
সৃষ্টিকর্তা কত মহান, কত দয়ালু তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি কতই না করুণাময়। তাই আমরা এর পরেও যেন সিয়াম বা রোজা না রেখে এ মাসে পর্দার অন্তরালে বসে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ বা অন্যকে খাবার গ্রহণে সহযোগিতা করে আল্লাহ কর্তৃক বন্ধকৃত জাহান্নামের দরজা ভেঙে তাতে যেন প্রবেশ না করি। এ মাসের মধ্যে রয়েছে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর। যে রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা এ মাসকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম আখ্যায়িত করেছেন।
যে রাতে ফেরেশতারা রুহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাতের ফজরের সূচনা পর্যন্ত। এ রাত একটি বরকতময় রাত। কারণ এতে বছরের কার্যাবলি নির্ধারিত হয়, কী ঘটবে, কী পরিবর্তন হবে ও বরকত ঘটবে এটি এ মাসের শেষ দশকে। সুতরাং যে ব্যক্তি সারা মাস ইমানের সঙ্গে নেকি লাভের আশায় সিয়াম (রোজা) রেখে সালাত আদায় ও কোরআন তেলাওয়াতের চেষ্টা করবে সে কদরের রাতে পৌঁছে যাবে।
এ মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুসলমান কল্যাণের ওপর রয়েছে। সুতরাং এটি বরকতময় মাস। মাসের শেষ ভাগে রয়েছে বেশি বরকত ও কল্যাণ। তাই রসুল (সা.) এ রাতের সন্ধানে শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে নেকি লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের সালাত আদায় করবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি-১৭৬৮) এবং এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সুরা কদর)।
এতদ্ব্যতীত রমজান মাসে যে দৃঢ় ইমানের সঙ্গে নেকি লাভের আশায় সিয়াম পালন করবে সে দাইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারি-১৭৬৩)।
ইসলামের তিনটি স্তম্ভ এ মাসে বিদ্যমান। যেমন ইমানি দৃঢ়তা নিয়ে এ মাসে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতসহ কিয়ামুল লাইল আদায় করি। তৃতীয় স্বম্ভ মাসব্যাপী সিয়াম পালনসহ যাদের ওপর জাকাত ফরজ তাদের অধিকাংশই অধিক নেকি লাভের আশায় জাকাত প্রদান এবং দান-সদকা করে থাকে।
যাদের সামর্থ্য আছে তাদের মধ্যে কেউ যদি এ মাসে ওমরাহ করেন তাহলে তিনি রসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজ করার সওয়াব পাবেন। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের সবাইকে রমজান মাসের সব নেকি অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply