অবৈধ ইমিগ্রান্ট ও সন্তানদের ফেডারেল সুবিধা বন্ধ

ডেস্ক রিপোর্ট :
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান আরও জোরদার করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তিনি অবৈধ ইমিগ্রান্টদের জন্য ফেডারেল সুবিধা বন্ধে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। এ আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ব্যক্তিরা আর কোনো সরকারি সহায়তা পাবেন না। এমনকি তাদের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশু-কিশোররাও আর কোনো সরকারি সুবিধার আওতায় আসবে না। ফ্লোরিডা থেকে হোয়াইট হাউজে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স-ওয়ানে এই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ব্যবস্থা আরও কঠোর করা এবং সরকারি ব্যয় কমানো।
এতদিন অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা পেতেন, এমনকি ট্যাক্স রিটার্নের ভর্তুকিও পেতেন। তবে নতুন আদেশের ফলে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগোসহ কয়েকটি শহর এবং ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, ইলিনয়, ভারমন্টসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যকে স্যাঙ্কচ্যুয়ারি সিটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব শহরে এতদিন অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার বা বহিষ্কার করা সম্ভব ছিল না এবং তারা সরকারি সুবিধাও পেয়ে আসছিলেন। তবে ট্রাম্পের নতুন আদেশের ফলে এসব সুবিধা বন্ধ হবে। এছাড়া, ৩০ দিনের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা ও অবস্থান নির্ধারণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘দ্য ফেডারেশন ফর আমেরিকান ইমিগ্রেশন রিফর্ম’-এর তথ্যমতে, প্রতি বছর ফেডারেল সরকার অবৈধ অভিবাসীদের জন্য প্রায় ৬৬.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। সংগঠনটি মনে করে, এই খরচ কমানো গেলে নিম্ন আয়ের আমেরিকানরা আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবে।
অভিবাসন-বিরোধীরা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও অনেক নাগরিক এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট-ইপসোসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৭% আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্প এই আদেশের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, অন্যদিকে ৪৩% তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে অবৈধ অভিবাসীদের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। যদিও তার সমর্থকরা এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এই পরিবর্তন কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে। সিএনএন।
অবৈধ ইমিগ্রান্ট শিশু বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ
বাবা-মায়ের সঙ্গ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে এমন লাখো অবৈধ অভিবাসী শিশুকে খুঁজে বের করতে অভিবাসন এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপক বিতাড়ন অভিযানের সম্প্রসারণ বলে মনে করা হচ্ছে। রয়টার্সের পর্যালোচনা করা একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকে এ তথ্য উঠে এসেছে।ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর স্মারকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিভাবকহীন অভিবাসী শিশুদের টার্গেট করে একটি নজিরবিহীন অভিযান শুরু হচ্ছে।
এতে চারটি বাস্তবায়ন ধাপের উল্লেখ করা হয়েছে। যার পরিকল্পনা ধাপ শুরু হয়েছে ২৭ জানুয়ারি থেকে। যদিও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে ৬ লাখেরও বেশি অভিভাবকহীন শিশু যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করেছে। গত কয়েক বছরে দশ হাজারেরও বেশি শিশুকে নির্বাসনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৩১ হাজার শিশু শুধু আদালতে হাজির না হওয়ার কারণে নির্বাসিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং আইসিই এই স্মারক এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে জিরো টলারেন্স নীতি চালু করেছিলেন। যার ফলে সীমান্তে শিশুদের তাদের বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। শিশুদের অফিস অফ রিফিউজি রিসেটেলমেন্ট (ওআরআর)-এর তত্ত্বাবধানে রাখা হয়, যখন তাদের বাবা-মাকে আটক বা নির্বাসিত করা হয়। এই পরিবার বিচ্ছিন্নকরণ নীতির কারণে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনা হয়। ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন এটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তবে এখনো ১,০০০-এর বেশি শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) -এর প্রধান আইনজীবী লি গেলারন্ট। আইসিইর স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই অভিযানের লক্ষ্য শুধু অভিবাসন আইন প্রয়োগ করা নয়, বরং শিশুদের মানব পাচার ও শোষণের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করাও এর উদ্দেশ্য। স্মারকে আরও বলা হয়েছে, শিশুদের ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজিরার নোটিশ দেওয়া হবে অথবা যদি ইতোমধ্যে নির্বাসনের আদেশ থাকে, তাহলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
আইসিই বিভিন্ন সরকারি সূত্র থেকে শিশুদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তাদের তিনটি ঝুঁকির ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। সেগুলো হলো উড়াল ঝুঁকি (আদালতে হাজির না হওয়া বা আত্মীয় নয় এমন স্পনসরদের কাছে ছাড়া হয়েছে এমন শিশু), সার্বজনীন নিরাপত্তা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা। এজেন্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ‘উড়াল ঝুঁকি’ তালিকাভুক্ত শিশুদের উপর বেশি জোর দিতে। আইসিই বিভিন্ন সরকারি ডাটাবেস ও রেকর্ড ব্যবহার করে শিশুদের অবস্থান শনাক্ত করছে। ডিএনএ টেস্ট ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে পরিবারের সম্পর্ক নিশ্চিত করতে। সন্দেহজনক ক্ষেত্রে বা নিয়মিতভাবে এ পরীক্ষার প্রয়োগ হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। আইনের আওতায় যেসব অভিবাসী তাদের থাকার বৈধ উপায় শেষ করেছে, তাদের নির্বাসিত করা যেতে পারে এমনকি তারা শিশু হলেও। তবে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের গ্রেফতারের ওপর গুরুত্ব দেয়। গত এক দশকে, সহিংসতা ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কেন্দ্রীয় আমেরিকা ও মেক্সিকো থেকে প্রচুর শিশু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বাবা-মার সঙ্গে থাকার জন্য এসেছে, আবার অনেকেই চোরাকারবারিদের মাধ্যমে প্রবেশ করেছে। ওআরআর-এর সাবেক আইসিই কর্মকর্তা এবং বর্তমান পরিচালক মেলিসা হারপার জানিয়েছেন, আইসিই বর্তমানে ২,৪৭,০০০ প্রতারণা, পাচার ও চোরাচালান সম্পর্কিত অভিযোগ তদন্ত করছে এবংএফবিআই-এর কাছে মামলা হস্তান্তর করছে। আইসিই-এর মতে, এই শিশুদের বেশিরভাগ এমন পরিবারে বসবাস করে যেখানে অন্য প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও অননুমোদিত অভিবাসী। ফলে এই শিশুদের অবস্থান খুঁজে বের করলে আইসিই সহজেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও গ্রেফতার করতে পারবে। ট্রাম্প প্রশাসন ওআরআর -এর শিশুদের ডাটাবেসেও প্রবেশাধিকার বাড়িয়েছে, যা স্পনসরদের অতীত যাচাইয়ে ব্যবহার করা হবে। নতুন নিয়ম অনুসারে, স্পনসর এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আঙুলের ছাপ জমা দিতে হবে। শিশুদের অভিভাবকদের অতীত যাচাই আরও কঠোর করা হবে।আইসিই-এর একাধিক আঞ্চলিক কার্যালয় এখন শিশুদের খুঁজে বের করার জন্য নতুন উপায় পরিকল্পনা করছে এবং ইমিগ্রেশন নথিপত্র প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন নীতির ফলে হাজার হাজার অভিবাসী শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এবং এটি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইসিই শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করেছে
‘উড়াল ঝুঁকি’ (Flight Risk)-আদালতে হাজির না হওয়া বা আত্মীয় নয় এমন স্পনসরদের কাছে ছাড়া হয়েছে এমন শিশু, ‘সার্বজনীন নিরাপত্তা’ (Public Safety) এবং সীমান্ত নিরাপত্তা’ (Border Security)। এজেন্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে- ’ফড়াল ঝুঁকি’ তালিকাভুক্ত শিশুদের উপর বেশি জোর দিতে। আইসিই বিভিন্ন সরকারি ডাটাবেস ও রেকর্ড ব্যবহার করে শিশুদের অবস্থান শনাক্ত করছে। ডিএনএ টেস্ট ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে পরিবারের সম্পর্ক নিশ্চিত করতে।
সন্দেহজনক ক্ষেত্রে বা নিয়মিতভাবে এই পরীক্ষার প্রয়োগ হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। আইনের আওতায়, যেসব অভিবাসী তাদের থাকার বৈধ উপায় শেষ করেছে, তাদের নির্বাসিত করা যেতে পারে এমনকি তারা শিশু হলেও। তবে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের ওপর গুরুত্ব দেয়। গত এক দশকে, সহিংসতা ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কেন্দ্রীয় আমেরিকা ও মেক্সিকো থেকে প্রচুর শিশু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বাবা-মার সাথে থাকার জন্য এসেছে, আবার অনেকেই চোরাকারবারিদের মাধ্যমে প্রবেশ করেছে। ওআরআর-এর সাবেক আইসিই কর্মকর্তা এবং বর্তমান পরিচালক মেলিসা হারপার জানিয়েছেন, আইসিই বর্তমানে ২,৪৭,০০০ প্রতারণা, পাচার ও চোরাচালান সম্পর্কিত অভিযোগ তদন্ত করছে এবংএফবিআই-এর কাছে মামলা হস্তান্তর করছে। আইসিই-এর মতে, এই শিশুদের বেশিরভাগ এমন পরিবারে বসবাস করে যেখানে অন্য প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও অননুমোদিত অভিবাসী।
ফলে এই শিশুদের অবস্থান খুঁজে বের করলে আইসিই সহজেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করতে পারবে। ট্রাম্প প্রশাসন ওআরআর-এর শিশুদের ডাটাবেসেও প্রবেশাধিকার বাড়িয়েছে, যা স্পনসরদের অতীত যাচাইয়ে ব্যবহার করা হবে। নতুন নিয়ম অনুসারে, স্পনসর এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আঙুলের ছাপ জমা দিতে হবে। শিশুদের অভিভাবকদের অতীত যাচাই আরো কঠোর করা হবে। আইসিই-এর একাধিক আঞ্চলিক কার্যালয় এখন শিশুদের খুঁজে বের করার জন্য নতুন উপায় পরিকল্পনা করছে এবং ইমিগ্রেশন নথিপত্র প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন নীতির ফলে হাজার হাজার অভিবাসী শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এবং এটি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *