1. [email protected] : @nexttech :
  2. [email protected] : SM Solaiman : SM Solaiman
বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২৪ অপরাহ্ন

অন্তিম সেলাম ! কমরেড সিরাজুল আলম খান !

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩
  • ৮৬ Time View

ডেস্ক রিপোর্ট :

সদ্য স্বাধীন দেশ। রক্তের বন্যা পেরিয়ে দেশে স্বাধীনতার পতাকা উঠেছে। লাল সবুজের পতাকাকে অভিবাদন জানিয়ে মানুষ আবার আশায় বুক বাঁধছে। আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যাশার শিখড়ে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজ আমরা যে যুদ্ধের ইতিহাস জানি, প্রকৃত যুদ্ধটা এমন ছিলো না। গ্রাম বাংলার নিরন্ন মানুষের যুদ্ধ আর বীরত্ব নিয়ে রচিত হয়নি ইতিহাস। ইতিহাস রচিত হয়েছে কখনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে, কখনো নিজেদের বর্ণনায় উঠে এসেছে সময়ের খণ্ড চিত্র।
স্কুলের ছাত্র ছিলাম। সময় থেকে এগিয়ে থাকা প্রজন্ম আমরা। আমাদের সন্তানরা অনুমানই করতে পারবে না, কোন বয়সে মানুষ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। কৈশোরের নিষ্পাপ বড় হয়ে উঠার সময়ে, আমরা যুদ্ধের স্লোগান দিয়েছি। গ্রেনেড, রাইফেল আমাদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে সে বয়সেই। ডানপিটে সময়েই আমাদের প্রজন্ম – যার যা আছে, তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ হয়েছে। দখলদারদের হাত থেকে দেশ মাতৃকার মুক্তির মিছিলে নিজেদের দুরন্ত সময়কে সমর্পিত করা প্রজন্ম।
স্বাধীন দেশের পতাকা উড়ছে। বিদ্ধস্থ স্বদেশ। নিরন্ন জনতা। চারদিকে হাহাকার আর বিশৃঙ্খলা। এসব সামাল দিয়ে দেশ গড়ার কাজে ব্যর্থই হয়েছিলেন তখনকার নেতৃত্ব। স্বাধীনতার পরপরই সেই কৈশোরে আমাদের কাছে বার্তা আসে, দেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সারা বিশ্বে তখন পুজিবাদ আর মার্কস বাদের লড়াই। বিশ্বের মানুষ ঝুঁকছে সমাজিক সাম্যের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের তরুণ নেতৃত্বের একটা অংশ তখনই এ বার্তা নিয়ে মাঠে নামেন। একদিকে মুজিববাদের স্লোগান, আরেকদিকে মার্কসবাদের মোহনীয় প্রচারণা।
আমাদের মতো তারুণ্যের কাছে তখনই একজন সিরাজুল আলম খান পরিচিত হয়ে উঠেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ছাত্র নেতৃত্বের বিদ্রোহের নেপথ্যের বহু বিষয় তখন আমাদের অজানা। এমনকি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নেতৃত্বের চরম বিরোধের বিষয়টিও আমাদের জানার কোন সুযোগ ছিল না। বহুকিছুই জানা গেছে বা জানা যাচ্ছে অনেক পরে। নানাভাবে রচিত ইতিহাস পরখ করে। এখনও এমন বহু বিরোধ বিভক্তির কোন স্পষ্ট ঘটনার নির্মোহ বিবরণ আমাদের কাছে নেই।
যদি ফিরে যাই বাহাত্তর তেহাত্তর সালে, দেখা যায় একজন সিরাজুল আলম খান আমাদের কাছে ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর নামেই জাসদ নামের রাজনৈতিক দল দ্রুত সংগঠিত হয়েছে। তাঁর নামই কেবল শুনেছি। কোথাও কোন সভায় তাঁকে বক্তৃতা দিতে দেখিনি সেসময়টিতে। পরিবর্তনের উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা আমাদের মতো লাখো তারুণ্যের কাছে একজন ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস। কার্ল মার্ক্সের দর্শন নিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে সাময়ের আহ্বান আমাদের তাড়িত করেছে।
রাষ্ট্রযন্ত্রে ঘুরে ফিরে একই গোস্টি, যারা শোষক। যারা মেহনেতি জনগণকে শোষণ করার জন্য রাষ্ট্র কাঠামোকে ব্যবহার করছে। এ কাঠামো ভেঙ্গে ফেলার আহ্বানে জীবন বাজী রাখতে সেসময়ের তারুণ্য জোট বাঁধতে শুরু করে। আমাদের কাছে সিরাজুল আলম খান একজন হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালা হয়ে উঠেন।
সময় দ্রুত গড়াতে থাকে। ইতিহাস ইতিহাসের নিয়মে এগিয়েছে। জাতীর জনক হিসেবে উপাধি দেয়া স্বাধীনতার নায়ককে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে জাসদের কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশ জুড়ে তখন বঙ্গবন্ধুর প্রকাশ্য বিরোধিতার অগ্রভাগে ছিল জাসদ। মনে পড়ে, মাত্র হাতেগুনা কয়েকজন জাসদ কর্মির জন্য থানা পাহারা দিতে রক্ষীবাহীনী বসাতে হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর হাতে বহু জাসদ কর্মি নিহত হয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শাসকদের টনক নাড়িয়ে দেয়ার কাজে জাসদের কর্মকান্ড আজকের দিনে চিন্তাও করা যায় না। জাসদ কর্মিদের কাছে তখন কিউবা সহ দক্ষিণ আমেরিকার বিপ্লবী কর্মকান্ডকে আদর্শ মনে করা হতো। ইতিহাসের এ অধ্যায়টি দীর্ঘ হয়নি। দীর্ঘ হলে কী হতো? এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এখন অবান্তর। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরিবর্তন এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বরাজনীতি অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। সে ইতিহাস, সে আলোচনাও ভিন্ন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বঞ্চিত আর সবচেয়ে মূল্য দেয়া দলের নাম জাসদ। কতো মেধাবী তারুণ্যের যৌবন গেছে বিপ্লবের অলীক স্বপ্ন দেখে। কতোজনের মৃত্যু হয়েছে, কতো পরিবার স্বজনহারা হয়েছে, নিঃস্ব হয়েছে এর কোন হিসেব কাউকে কোনদিন করতে দেখা যায়নি। কতো যুবকের যৌবন প্রেমহীন গেছে, নারীকে নয় ‘বিপ্লব’কে ভালোবেসে ! কোন নেতাও এসবের কোন দায় নেননি। যাদের দেখে তারুণ্যের দঙ্গল জীবনকে বাজী রেখেছে, তাদের কেউ কেউ নানা কিছু আঁকড়ে ধরে নিজেরাই আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছেন বা করছেন। লেখাপড়া ছেড়ে বিপ্লবের মোহে বিভোর কতোজনের জীবন ভিন্ন হয়েছে, তার হিসেব কে করবে! স্বাধীন বাংলাদেশের রচিত ইতিহাসে জাসদ অনুসারীদের ত্যাগকে ‘ সিস্টেম লস’ হিসেবেই দেখা হয়।
জাসদের রাজনীতি সবসময় পরিচালিত হয়েছে সিরাজুল আলম খানের নামে। প্রকাশ্যে দলের কোন কর্মিসভায়ও তাঁকে যোগ দিতে দেখা যায়নি। ফলে তাঁর নামে চলা সব কর্মসুচী, দলের সব সিদ্ধান্ত তাঁর পরামর্শেই হয়েছে, এমন সন্দেহ বিভিন্ন সময়ে প্রকট হয়েছে। দেশে বা দেশের বাইরে আসলেও সিরাজুল আলম খান কোন কিছুই স্পষ্ট করে বলতেন না। তাঁকে প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাওয়া যেতো না। মেধায় ও কর্মে এমন উচ্চতার লোকজনের সাথে তর্ক করা যায় না। জানার আগ্রহ প্রকাশ করা যায়। এমন চেষ্টা করে সিরাজুল আলম খানের সাথে সব সময়ই ব্যর্থ হতে হয়েছে। জাসদ গঠনের মুল পরিকল্পনা, নেপথ্য কারণ, গণবাহিনী গঠন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট, সাত নভেম্বর, ভারতীয় হাই কমিশনারকে জিম্মি করার ঘটনা-এসব নিয়ে যেকোন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গেছেন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সহ জাতীয় জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে যেতে দেখেছি সময়ের অন্যান্য নায়কদেরও। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি মরহুম জেনারেল ওসমানীকে বা মুক্তিযুদ্ধের অতিরিক্ত সহ-সর্বাধিনায়কে লে. কর্নেল এ আর চৌধুরীকেও এমন কোন প্রশ্ন করলে, তাঁরা এড়িয়ে যেতেন। মনে হতো কিছু গোপন করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
নিজেদের কর্ম, ভাবনা ও অবস্থান নিয়ে কেন অস্পষ্টতা রাখলেন তাঁরা? এ প্রশ্ন আমার মতো অনেককেই তাড়া করেছে। এরমধ্যে সিরাজুল আলম খান পুরোই একজন রহস্য মানব হিসেবে বিচরণ

এটিভি বাংলা / ইব্রাহিম চৌধুরী

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2022
কারিগরি সহায়তা: Next Tech