বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর ছেলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাঁর জানাজা কখন ও কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে দল এবং পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হবে বলে জানান শায়রুল কবির।
প্রবীণ রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার দোগাছি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
ব্যক্তিগত জীবনে শাহ মোয়াজ্জেম একজন সুলেখকও ছিলেন। ‘নিত্য কারাগারে’, ‘বলেছি বলছি বলবো’, ‘ছাব্বিশ সেল’, ‘জেল হত্যা মামলা’ তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে অন্যতম।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৪ সালে ঢাকার সেন্টগ্রেগরিজ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই এমএ ও এলএলবি পাস করেন তিনি।
বহু আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতা ১৯৫২ সালে নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তার ঠিকানা ছিল কারাগারে। এরপর একাধিকবার তিনি দেশের জন্য কারাবরণ করেন।
ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিন বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে টানা আড়াই ঘণ্টা ভাষণ দেন। নিজ হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করা সে সময়ের জাতীয় নেতাদের মধ্যে অন্যতম শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রবীণ এই রাজনীতিক। স্বাধীনতার পরের পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো চিফ হুইপ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর দ্বিতীয়বারের মতো চিফ হুইপ নির্বাচিত হন তিনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আশির দশকে শাহ মোয়াজেম হোসেন সরকারের মন্ত্রী, সংসদ উপনেতা ও উপপ্রধানমন্ত্রী হন।
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply