আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
রানি এলিজাবেথ গ্রীস্মকালীন আবাস স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসল প্রাসাদে ছিলেন। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) এ প্রাসাদে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লিজ ট্রাসকে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনুমোদন দেন রানি।
পরদিন বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) প্রিভি কাউন্সিলের সঙ্গে এক বৈঠক থাকলেও তা বাতিল করেন রানি।
এপির খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বালমোরাল প্যালেসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সকালে পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসকরা রানির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানান। এরপর তাকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।
দ্বিতীয় এলিজাবেথ (এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা ম্যারি ) মৃত্যুর আগে তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্য এবং আরও ১৫ টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রাণী। এলিজাবেথ লন্ডনের মেফেয়ারে ইয়র্কের ডিউক এবং ডাচেস (পরে রাজা জর্জ এবং রাণী এলিজাবেথ)-এর প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তার বাবা ১৯৩৬ সালে নিজের ভাই রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পরে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। আর সেই সময় থেকেই এলিজাবেথ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। তিনি বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষিত হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ স্থলসেনাবাহিনীর নারী বিভাগ অগজিলিয়ারি টেরটোরিয়াল সার্ভিসে (Auxiliary Territorial Service) কর্মরত থেকে জনসাধারণের দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপকে বিয়ে করেন। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চারটি সন্তান হয়: ওয়েলসের যুবরাজ চার্লস; রাজকুমারী অ্যান; ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রু; এবং ওয়েসেক্সের আর্ল যুবরাজ এডওয়ার্ড।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বাবা রাজা জর্জ মারা গেলে এলিজাবেথ কমনওয়েলথের প্রধান হন এবং সাতটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রেজিমেন্টের প্রধান হন। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং সিলন। ১৯৫৬ এবং ১৯৯২ সালের মধ্যে অঞ্চলগুলি স্বাধীনতা লাভ করার সাথে সাথে তার রাজ্যের সংখ্যা বিভিন্ন রকম হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এবং সিলন (শ্রীলঙ্কার নাম পরিবর্তন করা হয়) সহ রাজ্যগুলি প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে। তার অনেক ঐতিহাসিক পরিদর্শন এবং সভার মধ্যে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রে একটি রাষ্ট্রীয় সফর এবং পাঁচবার পোপের দর্শন বা সফর অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলিতে ১৯৫৩ সালে তার রাজ্যাভিযান এবং ১৯৭৭, ২০০২ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে তার রৌপ্য, স্বর্ণ এবং হীরক জয়ন্তী উদ্যাপন অন্তর্ভুক্ত। ২০১৭ সালে, তিনি নীলকান্তমণি জয়ন্তীতে পৌঁছানো প্রথম ব্রিটিশ রাজ্যশাসক হয়েছিলেন। তিনি সবচেয়ে দীর্ঘজীবী এবং সবচেয়ে দীর্ঘকাল ধরে শাসনকারী ব্রিটিশ রাজ্যশাসক। তিনি বিশ্বের ইতিহাসের দীর্ঘতম শাসনকারী নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত রাজ্যশাসক, জীবিত রাজা-রাণীদের মধ্যে সর্বাধিক দীর্ঘকালীন ধরে শাসনকারী রাজ্যশাসক এবং বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সর্বাধিক প্রবীণ ও দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রপ্রধান।
এলিজাবেথ মাঝে মধ্যে প্রজাতন্ত্রের অনুভূতি এবং রাজপরিবারের চাপে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিশেষত তার সন্তানদের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে ১৯৯২ সাল ছিল তার জন্য এক “ভয়াবহ বছর” । এরপর ১৯৯৭ সালে তার প্রাক্তন পুত্রবধূ ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েলসের মৃত্যুর পরেও তিনি সমালোচিত হন।
এটিভি বাংলা / হৃদয়
Leave a Reply