মশারও আছে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা!

লাইফস্টাইল ডেস্ক :
‘মশা’। এই ছোট্ট প্রাণীর কারণে অতিষ্ঠ মানুষের জীবন। সারাদিন দেখা নেই, অথচ সন্ধ্যা হলেই বিনা আমন্ত্রণে ঘরে এসে হাজির! এরপর শুরু হয় উৎপাত। এছাড়া মশার কিছু প্রজাতি দিনের বেলাতেও মানুষকে যন্ত্রণা দিতে চলে আসে। তবে এতকিছুর পরও মশার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে, জানতেন কি?

প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ মশাবাহিত রোগে মারা যায়; যার দরুন মশা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুজ্বর, চিকুনগুনিয়া ও জিকা’র মতো মশাবাহিত রোগ পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রাণীদেহ থেকে বের হওয়া কার্বনডাই অক্সাইড, গন্ধ ও তাপমাত্রা মশাকে মানুষ নাকি অন্য কোনো প্রাণী, তা শনাক্তে সহায়তা করে। শুধুমাত্র স্ত্রী মশাই প্রাণীদেহ থেকে রক্ত খেয়ে থাকে। আর এ রক্ত বংশবিস্তারের জন্য ডিম তৈরিতে প্রোটিনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। পুরুষ মশারা মানুষকে কামড়ায় না, শুধু উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে রস সংগ্রহ করে। কিন্ত এই মশার কি কোনো উপকারিতা আছে?

মশা পৃথিবীর খাদ্য-শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৩৪০০ প্রজাতির মশা কোনো ক্ষতি করে না। কিছু মাকড়সা, টিকটিকি, গিরগিটি, ব্যাঙ এদের মুখ্য খাদ্য এই মশা। এছাড়া মশার ডিম মাছেরা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। তাই মাছের খাদ্য চাহিদা মেটাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে মশা। যখন মশা উড়ন্ত অবস্থায় থাকে তখন ড্রাগন-ফ্লাই, ছোট ছোট পাখি ও কীটপতঙ্গ মশাকে খেয়ে জীবনধারণ করে।

ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির পতঙ্গ-বিজ্ঞানী লউনিবোস বলেন, ‘মশারা ফুলের মধু খায়, যা পরাগায়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। মশাদের যদি পরিপূর্ণ বিলুপ্তি হয়, তাহলে এসবের সাথে সাথে আরও বহু খাদ্য-শৃঙ্খলের উপর প্রভাব পড়বে।’ যদিও অনেক গবেষক বলছেন, পরাগায়ন ও খাদ্য হিসেবে মশার উপযোগিতা অন্য কোনো পতঙ্গ সহজেই পূরণ করতে পারবে। কিন্তু তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যে পতঙ্গটি মশার প্রতিস্থাপক হবে, সেটি মশার চেয়েও ভয়ঙ্কর এবং দ্রুতগতিতে রোগ বিস্তার করবে।’

এছাড়াও মশা না থাকলে পাখির সংখ্যা ব্যাপক হারে কমবে বলে ধারণা করা হয়। অনেক কীট-তাত্ত্বিকদের মতে, মশার কারণে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জঙ্গল এলাকায় মানুষ বসবাস করতে পারে না। সেসব অঞ্চলে মশা না থাকলে মানুষ আরও অনেক বেশি গাছপালা কেটে বন উজাড় করে বসতি স্থাপন করত।

এদিকে অনেক বেশি পরিমাণ মশার বসবাস উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে। প্রতি বছর যে পরিমাণ পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসে তাদের মূল খাদ্য হচ্ছে মশা। তাই যদি মশা-ই না থাকে, তাহলে প্রায় ৫০ শতাংশ পরিযায়ী পাখি আর দুই মেরুতে আসবে না। ফলে সেখানকার পরিবেশ বদলাতে শুরু করবে।
তাছাড়া ভিনদেশ থেকেও বছরের নানা সময় লক্ষাধিক গবাদিপশু এই অংশে মাইগ্রেট হয়ে থাকে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে যে জায়গায় মশার ঝাঁক বেশি থাকে, সে জায়গা এড়িয়ে অন্য পথ বেছে নেয় এই গবাদি প্রাণীরা। হঠাৎ যদি কোনো বছর এই মশার ঝাঁক না থাকে, তাহলে কোন দিকে যেতে হবে, তা তো বুঝতেই পারবে না এই গবাদি পশুরা। ফলে রাস্তা হারিয়ে গণহারে সবাই মারা যাবে। আর এরা এত সংখ্যায় মারা গেলে অন্য মাংসাশী প্রাণীরা কী খাবে? কেননা এদের গোবরে থাকা বীজের কারণে যে গাছেদের জন্ম হয় তা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।

এটিভি বাংলা / হৃদয়


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *