আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক:
রাশিয়া ইউক্রেনের হাসপাতাল ও স্কুলসহ বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা।
স্টেফানিশিনা বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের মুখে বেসামরিক লোকদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
তিনি বলেন, রুশ সেনারা আকাশ ও স্থলভাগে সন্ত্রাসবাদ চালাচ্ছে।
চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে হামলা চালানোর বিষয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউক্রেনের একাধিক হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।
রবিবার সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্রেব্রেয়াসাস বলেন, ইউক্রেনের হাসপাতালে রুশ হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। হাসপাতালে হামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
যুক্তরাজ্যের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ইউক্রেনের জনবহুল এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ান বাহিনী। তবে ইউক্রেনের প্রতিরোধের ফলে রুশ অগ্রযাত্রা কিছুটা ধীর হয়ে গেছে।
সংস্থাটি বলছে, মস্কো ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে নির্বিচারে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে খারকিভ, চেরনিহিভ এবং মারিউপুলের বেসামরিক জনবহুল এলাকা টার্গেট করে অভিযান চালাচ্ছে। রাশিয়া ১৯৯৯ সালে চেচনিয়া এবং ২০১৬ সালে সিরিয়ায় একই কৌশল অবলম্বন করে বলে অভিযোগ ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের।
ব্রিটেনের গোয়েন্দারা সবশেষ জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের মাত্রা এবং শক্তি বিস্মিত করেছে রাশিয়াকে।
ব্রিটেনসহ পশ্চিমা অন্যান্য দেশের এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মস্কো। দেশটি জানিয়েছে, বেসামরিক স্থাপনা এরিয়ে পরিকল্পিতভাবেই অভিযান চলছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনে নির্দেশের পরপরই বিশাল ব্যবহর ঢুকে পড়ে ইউক্রেনে। উভয়পক্ষের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত অনেক বেসামরিকের পাশাপাশি সামরিক সদস্যও নিহত হয়েছেন।
২রা মার্চ উক্রেনের উত্তর-পূর্ব শহর খারকিভে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ান প্যারাট্রুপাররা। সেখানে একটি সামরিক হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে শহরটির ওপর রুশ গোলাবর্ষণ আরও তীব্র হয়ে ওঠার পর এ আক্রমণের খবর এলো বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেন সরকারের উপদেষ্টা অ্যান্টন জেরেশেঙ্কো টেলিগ্রামে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, প্যারাট্রুপারদের হামলায় একটি ভবনে আগুন জ্বলছে।
ভবনটি কারাজিন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি অবস্থিত।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, বুধবার ভোরে (স্থানীয় সময়) খারকিভ ও আশপাশের এলাকায় বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে।
বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি খারকিভে রাশিয়ার বোমাবর্ষণকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে খারকিভের কেন্দ্রস্থলে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হন। এ হামলা শহরের কেন্দ্রস্থলে ফ্রিডম স্কয়ারের সরকারি ভবনগুলো লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরে খারকিভের একটি আবাসিক এলাকায় আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়।
এদিন শহরটিতে অন্তত ১৭ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে শহরটির জরুরি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে রুশ হামলায় এ পর্যন্ত ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ শিশু রয়েছে।
এদিকে সিএনএন নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনের শহর খেরসন দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল কিছু স্ক্রিনশট ও ভিডিওর আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ শহরে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রুশ বাহিনী স্কুলসহ বহুতল আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালালে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
চেরনিহিভ শহরটি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। উত্তর দিক থেকে এই শহরটিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে রুশ সামরিক বাহিনী।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এই এক সপ্তাহেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সামরিক অবকাঠামোর বাইরে রাশিয়ার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আবাসিক ভবন, স্কুল ও হাসপাতাল। আর তাই জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।
চেরহিনিভ শহরের ডেপুটি মেয়র রেজিনা গুসাক এএফপিকে জানিয়েছেন, শহরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বোমা হামলা করেছে। এদিকে চেরহিনিভ শহরে রুশ হামলার বেশ কিছু ছবি সামনে এনেছে ইউক্রেনের জরুরি বিষয়ক দফতর।
ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, রুশ হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অ্যাপার্টমেন্টগুলো থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বেরিয়ে আসছে এবং ভবনের ধ্বংসাবশেষ চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এছাড়া উদ্ধারকারীদেরকে স্ট্রেচারে করে হামলায় নিহতদের মৃতদেহও বহন করতে দেখা যায়।
চেরনিহিভ অঞ্চলের গর্ভনর ব্যাচেস্লাভ চাউস টেলিগ্রামে বলেন, ‘রুশ যুদ্ধবিমান চেরনিহিভের স্টারায়া পদুসিকভা এলাকায় দু’টি স্কুলে এবং সেখানকার বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়েছে। উদ্ধারকারীরা ওই এলাকায় কাজ করছেন।’
এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালালেও মস্কো বরারবরই দাবি করছে যে, তারা বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে না। যদিও রুশ এই দাবির বিপরীতে ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে।
এটিভি বাংলা/সামিয়া
Leave a Reply