ডেস্ক রিপোর্ট:
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনেও বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের ইসিতে নিয়োগ দেয়ার পক্ষে মত দেন। তবে, এদের মধ্যে কারও কারও বক্তব্যে উঠে এসেছে নিরপেক্ষ নয়, সাহসী ব্যক্তিদেরই ইসিতে দেখতে চান তারা। আবার কেউ বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এমন ব্যক্তিরা যেন কমিশনে নিয়োগ না পান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে রবিবারও বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বিশিষ্টজনদের দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিশিষ্টজনেরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বৈঠকে ইতিহাসবিদ, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নিরপক্ষ ব্যক্তি পাওয়া কঠিন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তি পাওয়া যাবে না। কমিশনের জন্য মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হলেই চলবে। তবে, কমিশনের জন্য যাদের মনোনীত করা হবে তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের হন। আবার নির্বাচন কমিশন চাইলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এর কারণ এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলসহ অনেকগুলো বিষয় জড়িত।’ তবে, কোনও নাম প্রস্তাব করেননি বলেও জানান ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন।
বৈঠকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি, লেখক শাহরিয়ার কবির বলেন, নিরপেক্ষ ব্যক্তি চেয়ে কমিশনের জন্য সৎ, সাহসী ব্যক্তির প্রয়োজন। কমিশনের জন্য যেসব নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সেসব নাম প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। বলেন, যারা নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের নামও প্রকাশ করা হোক। সাংগঠনিকভাবে ইসি গঠনে নিজেও নাম প্রস্তাব করেছেন বলে জানান শাহরিয়ার কবির।
সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল জানান, কমিশনের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হতে হবে।
সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসি গঠনে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে। এমনকি নাম প্রস্তাবকারীদের নামও প্রকাশ করতে হবে। এতে মানদণ্ড পরিমাপ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
বৈঠকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, এমন ব্যক্তিরা যেন না আসে। যাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, তাদের যেন খুঁজে বের করা হয়। ফের দায়িত্ব দেয়া হলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রস্তাব অথবা দায়িত্ব পেলে ভেবে দেখবেন।
বৈঠক শেষে সার্চ কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান জানান, কমিটিতে জমা পড়া সব নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল নাম দেয়নি, তাদেরকে আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে জমা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া সভায় ২০ জনের নাম পাওয়া গেছে বলেও জানান সার্চ কমিটির সভাপতি।
বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠকে রবিবার যাদের আমন্ত্রণ জানান হয় তারা হলেন-সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, আব্দুল মোবারক, লে. কর্নেল (অব) সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক), প্রজন্ম একাত্তরের আসিফ মুনির তন্ময়, নুজহাত চৌধুরী, সাংবাদিক ও লেখক হারুন হাবিব, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি নুরুল আলম, শিক্ষাবিদ ড. আইনুন নিশাত, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুস, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল, কবি ও সাহিত্যিক মহাদেব সাহা, গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অধ্যাপক ডা. উবায়দুল কবির চৌধুরী, ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, ড. তোফায়েল আহমেদ, শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ। এছাড়াও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এর আগে, গতকাল শনিবার দুই দফায় ২৫ বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি। সেখানে আগামী নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন তারা।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে নিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনের মতামত নেয় সার্চ কমিটি।
এরপর সিইসি ও অন্যান্য ইসি পদে দুইজন করে মোট দশজনের নাম রাষ্ট্রপ্রতির কাছে সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এই কমিশনের নেতৃত্বেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এটিভি বাংলা/ফয়সাল
Leave a Reply