বিনোদন প্রতিবেদক:
ভারতের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে উপার্জন শুরু করেন। ওই বয়সেই মারাঠি সিনেমায় অভিনয় ও গান দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। সেই বছরই হারান বাবাকে। তারপর থেকে পরিবারের ভরণ-পোষণের সমস্ত দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট তিন বোন হলেন উষা, মীনা আর আশা। আর ভাই হৃদয়নাথ।
প্রথমবার উপার্জন করেছিলেন মাত্র ২৫ রুপি। কিন্তু রেখে গেছেন প্রায় ৩৭০ কোটি রুপি সম্পত্তি। সঙ্গে রয়েছে কিছু শৌখিন গাড়িও। গানের রয়্যালিটি থেকে মাসে ৪০ লক্ষ রুপির কাছাকাছি আয় করতেন সুর-সম্রাজ্ঞী। বছরে পেতেন প্রায় ৬ কোটি রুপি। কিছু রিপোর্ট দাবি করেছে ‘কোকিলকণ্ঠী’র মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭০ কোটি। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের পশ এলাকায় থাকতেন। পেডার রোডে অবস্থিত প্রভাকুঞ্জ ভবনে থাকতেন লতা মঙ্গেশকর। যদিও কোটিপতি হয়েও তিনি ছিলেন মাটির মানুষ।
আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে লতা মঙ্গেশকরের। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় পূর্ণ মর্যাদায় ভারতের মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এসময় লতা মঙ্গেশকরের মুখাগ্নি করেন তাঁর ভাই হৃদয়নাথ।
এদিন শিবাজি পার্কে এই ভারতরত্নকে শেষ শ্রদ্ধা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের মতো বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা। শাহরুখ খান, শচীন তেন্ডুলকর, আমির খান, রণবীর কাপুর, জাভেদ আখতার, শ্রদ্ধা কাপুরদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন হাজারও সাধারণ মানুষ।
উপমহাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে ভারতে দুই দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। শোনা যায়, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। দুঙ্গারপুরের রাজ ঘরানার মহারাজ রাজ সিং-এর প্রেমে পড়েছিলেন লতা। লতার দাদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবেই বিসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি রাজ সিং দুঙ্গারপুরের সঙ্গে লতার পরিচয়। তার টানেই ভালবাসতে শেখা ক্রিকেটকেও।
প্রেম এসেছিল। লতার গানে মুগ্ধ ছিলেন রাজ সিং। কিন্তু সেই প্রেম গভীর বন্ধনে পৌঁছায়নি। রাজ ঘরানার ছেলে রাজ সিং নাকি বাবা-মাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, কোনও সাধারণ পরিবারের মেয়েকে তিনি রাজবংশের বৌ করে আনবেন না। সেই প্রতিজ্ঞা বজায় রেখেছিলেন রাজ সিং। তিনিও আর বিয়ে করেননি।
লতার চেয়ে ৬ বছরের বড় রাজ সিং আদর করে লতাকে ‘মিট্টু’ বলে ডাকতেন। তাঁর পকেটে সব সময়ে থাকত একটি রেকর্ডার। তাতে রেকর্ড করা থাকত লতা মঙ্গেশকরের জনপ্রিয় কিছু গান। ২০০৯ সালে প্রয়াত হন লতার জীবনের অন্যতম কাছের মানুষ, রাজ সিং দুঙ্গারপুর।
উল্লেখ্য, লতা মঙ্গেশকরের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। তিনি এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন। এছাড়া ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই। তিনি ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ৪টি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ২টি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।
১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করে। সঙ্গীতে অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়; এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সংগীতশিল্পী। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাবে ভূষিত করে।
এটিভি বাংলা/সুমন
Leave a Reply