মিথ্যে ভালোবাসার গল্প শুনতে শুনতে আমি ভুলেই গিয়েছি সত্যিকারের ভালোবাসা কেমন হয়। সত্যিকারের ভালোবাসা একটি শূন্য বা ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয়কে পূর্ণতা দান করতে পারে আবার মিথ্যে ভালোবাসা পূর্ণ হৃদয়কে ভেঙ্গে ছার-খার করে দিতে পারে। তাই ভালোবাসার শুরুতে থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কে থাকাকালীন সময়ে সজাগ থাকতে হবে। সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে, কেমন চলছে সেটি চিন্তা ভাবনা করতে হবে, মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায় জানতে হবে। সত্যিকারের ভালোবাসা চেনার উপায় বা মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায়
বন্ধুদের সাথে পরিচয় করাতে আপত্তিঃ
যে মানুষটিকে আমরা সম্মান করি, মন থেকে ভালোবাসি তাকে কি অন্যদের কাছে লুকিয়ে রাখবো নাকি পরিচয় করিয়ে দিব? ভালোবাসার মানুষ সবার কাছেই আলাদা, অনন্য। প্রেমিক বা প্রেমিকার মনে হাজারো ভাবনা আসে। সে তার মনের মানুষটিকে ভালোবাসার মানুষ নিয়ে যে সুখে আছে এটা পৃথীবিকে জানিয়ে দিয়ে চায়। ভালোবাসা কেমন হয় এটি আমাদের জানা কিন্তু এই জানা জিনিস অজানাও থকে যেতে পারে যদি সব কিছুই মিথ্যে হয়, ভালোবাসা বোঝার উপায় যদি ভুল হয়।
যদি কোন প্রেমিক বা প্রেমিকা যৌক্তিক কারণ ছাড়া তার পার্টনারকে অন্যদের থেকে আড়ালে রাখতে চায়, গোপনীয়তা রক্ষা করতে চায়, পরিচয় করিয়ে দিতে না চায় তাহলে ধরে নেওয়া যায় এই ভালোবাসা মিথ্যে ভালোবাসা। মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায় বা ভালোবাসা পরীক্ষা করার উপায় গুলোর মধ্যে অতিরিক্ত প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা রক্ষা পরিষ্কার করে দেয় এটি মিথ্যে ভালোবাসা। আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা এতো ব্যাকরণ মানে না। সত্যিকারের ভালোবাসা লুকিয়ে থাকতে চায় না, এটি সবসময়ই প্রকাশিত হতে চায়। কখনো আবেগে, কখনো সচেতনতায়। তাই পার্টনার যদি পরিচিত বলয়ে, বন্ধুদের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতে ইতস্তত বোধ করে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি মিথ্যে ভালোবাসা।
মূল ভালোবাসা টাকাঃ
বর্তমান সময়ে হয় না এমন কিছুই নেই। সত্যিকারের ভালোবাসার যেমন অভাব নেই, তেমনি মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায় এরও অভাব নেই। কিন্তু ভালোবাসা যদি ফুসকা খাওয়ায়, রেস্টুরেন্টে ঘুরাঘুরি করায়, হাত খরচ দেওয়ায় বা বার্থডে উদযাপনেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে সেটি মিথ্যে ভালোবাসারই নামান্তর হবে। এখনকার উঠতি বয়সের মেয়েরা যত ভালোবেসে সম্পর্ক করে তার বেশি তারা একাকীত্ব কাটানোর জন্য, টাইম পাস করার জন্য সম্পর্ক করে থাকে। সম্পর্কগুলো গড়েতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি ভাঙতেও সময় লাগবে না। কারণ ভালোবাসা এ ক্ষেত্রে কেবল মাত্র আর্থিক প্রয়োজনের জন্য। তাই যদি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার চাহিদা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে থাকে এবং আপনার আর্থিক চাপকে সে চাপ মনে না করে, অভাবকে অভাব মনে না করে, তাহলে বুঝে নিবেন এটি সত্যিকারের ভালোবাসা নয়। নিছক ছলনা মাত্র প্রতারণাও।
শপিং গার্লঃ
মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম উপায় হল শপিং গার্ল কিনা চিহ্নিত করা। ভালোবাসা নামে ছলছাতুরি করে নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানো কখনোই ভাল কাজ হতে পারে না। অনেক সম্পর্কে শুনেছি- গার্ল ফ্রেন্ড শপিং করে দেওয়ার জন্য অনবরত প্রেসার দিতে থাকে। শপিং করে দিতে না পারলে আনস্মার্ট, বলে সম্বোধনও করে থাকে। তাই আপনার প্রেমিকা কেবল শপিং করার জন্য আপনাকে ব্যবহার করছে কিনা, প্রেমিকা শপিং গার্ল কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন।
অন্যেদের কাছে আপনাকে ছোট করাঃ
আমার জীবনের গুরু, যাকে আমি মন থেকে শ্রদ্ধা করি, যার নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করি- শহীদ আল বোখারী মহাজাতক [ সবাই সম্মান করে গুরুজী বলে সম্বোধন করেন] এক আলোচনায় বলেছেন- স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে একজন আরেকজনের পোশাক। স্বামীর সম্মান মানে স্ত্রীর সম্মান, স্ত্রীর সম্মান মানে স্বামীর সম্মান।
তেমনিভাবে দুজন মানুষ যখন একসাথে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সম্পর্ক শুরু করে তখন তাদের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ থাকবে এটাই যুক্তিসংগত। কিন্তু কোন কারণে যদি এমন না হয়ে প্রেমিক/প্রেমিকা আপনাকে আপনার প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে বিভিন্ন সময়ে অন্যদের কাছে ছোট করে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটী সত্যিকারের ভালোবাসা নয়। এটি মিথ্যে ভালোবাসা। মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায় হিসেবে কোন ঘটনা যদি আপনার সাথে প্রতিনিয়ত ঘটে থাকে তাহলে এখনি সতর্ক হয়ে যাবেন।
অবহেলা করাঃ
সত্যিকারের ভালোবাসায় ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে এক মুহূর্ত থাকা আসহনীয় ব্যাপার হয়ে যায়। কোন কারণে যদি এই ছন্দে বাধা আসে, ক্ষেই যদি হারিয়ে যায়, মন যদি উঠে যায়, আবেগ যদি কাজ না করে, তাহলেই কেবল প্রিয়জন হয়ে যেতে পারে প্রয়োজন, করা শুরু করে দিতে পারে অবহেলা। এই অবহেলার স্বীকার যারা হয়েছেন তারা ভালোভাবেই অবহেলার কষ্ট অনুমান করতে পারবেন। আমাদের সচেতন ভাবে সব সময় সঙ্গী/সঙ্গিনীর সাথে মার্জিত/সুন্দর আচরন করতে হবে যেন কোনভাবেই আমাদের আচরনে কষ্ট না পায়। অন্য কোন কারনে যদি পার্টনার অবহেলা করে সেটির জবাব আল্লাহর কাছে দিবে। দোষী যেই হোক, অভেলা যদি করা শুরু করে তাহলে এটি খুব পরিস্কার হয়ে যায় সত্যিকারের ভালোবাসা নয়। তাই যখনই দেখবেন আপনি পারস্পারিক সম্পর্কে অবহেলার স্বীকার হচ্ছেন ধরে নিবেন এটী মিথ্যে ভালোবাসা কারণ এটিও মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায়।
সময় কাটাতে অনীহাঃ
এক গবেষণার রিপর্টে পড়েছিলাম- প্রেমের শুরুতে বা প্রেমে পড়ার পর প্রেমিক প্রেমিকা গড়ে ৪-৬ ঘন্টা একসাথে কাটায় বা একে অন্যের ব্যাপারে চিন্তা করে কাটায়। যেখানে এতো সেরাটোনিন, এতো মনোযোগ, সব কিছু একদিকে আর প্রেমিক/প্রেমিকা আরেকদিকে- সেখানে সময় কাটাতে অনীহা থাকবে? অসম্ভব। নিশ্চয়ই কোন গন্ডগল আছে। আপনাকে বুঝতে হবে কিংবা বলা যেতে পারে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে যে আপনার ভালোবাসার মানুষটি আপনাকে সত্যিকারের ভালোবাসে না। আপনি নিজে যেভাবে ডিল করেন, সে মানুষটি একদম তা করে না। তার মিথ্যে ভালোবাসার জালে আপনি বন্দি হয়ে আছেন।
পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত থাকাঃ
বিশ্বাসের বলয়েই মূলত সম্পর্কে গুলো তৈরি হয়। একজন আরেক জনের বিশ্বাস!!! যদি কোন পরিস্থিতিতে এই বিশ্বাসে ফাটল ধরে তাহলে পুনঃবিশ্বাস করা খুবই কঠিন হয়ে যায়
সম্পর্কে থাকাকালীন সময়ে যদি প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তাহলে চোখ বন্ধ করে বলা যায় আপনার জন্য এতো দিন ছিল কেবল মিথ্যে ভালোবাসা। কারণ যে প্রেমিক বা প্রেমিকা, স্বামী বা স্ত্রী একটি সম্পর্কে থাকা অবস্থায় অন্য আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে তার ভালোবাসা কখনোই সত্যিকারের ভালোবাসা হতে পারে না।এটা স্রেফ ধোঁকা ছিল। তাকে ২য় বার বিশ্বাস করা বিরাট ভুল হবে।মিথ্যে ভালোবাসা চেনার উপায় এর মধ্যে আলাদা করে বলার মত উপায় এটি।
শারীরিক অসুস্থতায় বিরক্তিঃ
সুখে-দুখে আনন্দে বেদনায়- পরিবারের আমি তোমার তুমি আমার এই হয় সম্পর্ক শুরুর “স্লোগান”। কিছু বাস্তবতা বোঝা যাবে বাস্তবে। খেয়াল করলে বুঝবেন যারা আপনার ভালো চায় তারা কখনোই আপনার বিপদে স্থির থাকতে পারবেন না। আপনার যে কোন শারীরিক অসুস্থতায় তারা অস্থির হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার প্রতি যাদের ভালোবাসা নেই তারা আপনার বার বার বা কয়েকদিন পর পর অসুস্থ হওয়াটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে না বরং বিরিক্ত হয়ে উঠবে। তাই মনে রাখবেন যে আপনার অসুস্থতায় না হয়ে বিরক্ত হয় তার মনে আপনার জন্য কোন স্থান নেই। যা সমমর্মী দেখছেন এটি কেবল অভিনয়।
ছেড়ে যাওয়ার ভয় দেখানোঃ
সম্পর্ক একদিনের ব্যাপার নয়। অন্তত জীবন একসাথে অতিবাহিত করার ব্যাপার। এতো ত্যাগ এতো কিছু তো শুধুমাত্র মনের মানুষটিকে কাছে পাওয়ার জন্য, থাকার জন্য। আর প্রেম ভালোবাসার মত আবেগির ব্যাপারে ছেড়ে চলে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।
সঙ্গী বা সঙ্গীনির সাথে থাকার নূন্যতম ইচ্ছা থাকলেও মানুষ কখনো ছেড়ে যাওয়ার ভয় দেখায় না। সম্পর্কে যদি এমন কিছু হুমকি প্রায় আপনার দিয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে পারে সে একদিন ছেড়ে চলে যাবে। কারও মনে বিন্দু পরিমান ভালোবাসা থাকলেও প্রতিনিয়ত ছেড়ে যাওয়ার ভয় দেখাবে না। তাই এক্ষেত্রেও ধরে নিতে পারেন এটি মিথ্যে ভালোবাসা।
প্রথম দিনেই দামী রেষ্টুরেন্টে বসার অফারঃ সম্পর্ক শুরু না হতেই দামী রেস্টুরেন্টে বসার অফার দিবে। আপনি রাজি হলেন তো ফতুর হলেন। নিঃস্বার্থ প্রেম ফুটপাতে দাড়িয়েই হয়। অথবা বড় সপিং মলে দেখা করার অফার। তাহলেই আপনি বুঝবেন। দামী কিছু কিনে দেয়ার পায়তারা করছে। এসব বিষয়ে গুলো দেখলে শুরুতে কেটে পড়ুন। নয়তো সময় যত গড়াবে ফেরার কষ্টটাও বাড়বে।
Leave a Reply